back to top

আরণ্যক উপন্যাস – বিভূতিভূষণের অমর প্রকৃতি কাব্য | সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ ও বিষয়বস্তু

- Advertisement -

আরণ্যক উপন্যাস

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম সেরা রচনা – প্রকৃতি ও মানবমনের অনবদ্য সংমিশ্রণ


আরণ্যক উপন্যাসের প্রচ্ছদ

লেখক পরিচিতি

আরণ্যক নামের অর্থ কি, আরণ্যক উপন্যাসের পটভূমি, আরণ্যক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০) বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক। তাঁর প্রকৃতিপ্রেম ও সূক্ষ্ম মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ক্ষমতা ‘আরণ্যক’ উপন্যাসে অসাধারণভাবে ফুটে উঠেছে। ‘পথের পাঁচালী’, ‘আরণ্যক’, ‘চাঁদের পাহাড়’, ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’, ‘ইছামতী’ তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা। বাংলা সাহিত্যে প্রকৃতির এমন সতেজ বর্ণনা আর কোনো লেখকের কলমে ফুটে ওঠেনি।

আরণ্যক উপন্যাসের সাধারণ পরিচয়

আরণ্যক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আরণ্যক নামের অর্থ কি, আরণ্যক উপন্যাসের পটভূমি, আরণ্যক

প্রকাশকাল:১৯৩৯
প্রকাশক:গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এন্ড সন্স
পৃষ্ঠা সংখ্যা:২৩২
ভাষা:বাংলা
জনপ্রিয়তা:বনজীবন ও প্রকৃতিপ্রেমীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং আজও সমান প্রাসঙ্গিক

‘আরণ্যক’ শব্দটির অর্থ হল “অরণ্য সম্পর্কিত” বা “বনবাসী”। এটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি অর্ধ-আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস যা ১৯৩৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। এই উপন্যাসে একজন যুবক (সত্যচরণ) কলকাতার শহুরে জীবনযাপন থেকে সরে এসে ছোট্ট একটি বনাঞ্চলে (লোবতুলিয়া, পালামৌ) বসবাস করতে শুরু করেন এবং প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে যান।

উপন্যাসটিতে এক অনন্য গ্রাম্য পরিবেশ, আদিবাসীদের জীবন, অরণ্যের বিভিন্ন প্রাণী, ঋতু পরিবর্তনের সৌন্দর্য, এবং একজন শিক্ষিত শহুরে যুবকের মনে বনবাসের ফলে যে পরিবর্তন আসে – সব কিছুই অসাধারণ কাব্যিক ভাষায় চিত্রিত হয়েছে। এটি শুধু একটি কাহিনী নয়, বরং একটি চিন্তাধারা এবং জীবনদর্শনের প্রতিফলন।

আরণ্যক শব্দের অর্থ ও ইতিহাস

‘আরণ্যক’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল “অরণ্য-সম্বন্ধীয়” বা “বনে থাকা”। এই শব্দটি সংস্কৃত শব্দ ‘অরণ্য’ থেকে এসেছে, যার অর্থ বন বা জঙ্গল। প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে, বিশেষত বৈদিক সাহিত্যে, ‘আরণ্যক’ ছিল বিশেষ ধরনের ধর্মগ্রন্থ যা বনবাসী ঋষিদের দ্বারা রচিত হয়েছিল।

ঐতরেয় আরণ্যক, বৃহদারণ্যক উপনিষদ, তৈত্তিরীয় আরণ্যক প্রভৃতি ছিল প্রাচীন ভারতের গুরুত্বপূর্ণ আরণ্যক গ্রন্থ। এই সব গ্রন্থে প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক, আত্মজ্ঞান, এবং আধ্যাত্মিক চিন্তা-ভাবনার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছিল। এগুলো মূলত বনাশ্রমে থাকা ঋষিদের চিন্তাভাবনা ও জ্ঞানের সংকলন।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর উপন্যাসে এই প্রাচীন শব্দটি ব্যবহার করে একদিকে বনজীবনের প্রতি মানুষের আদিম আকর্ষণ এবং অন্যদিকে আধুনিক জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে একসূত্রে গেঁথেছেন। তাঁর ‘আরণ্যকে’ শব্দটি শুধু স্থানগত অর্থে নয়, বরং একটি মানসিক অবস্থার প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে।

আরণ্যক উপন্যাসের বিষয়বস্তু

‘আরণ্যক’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র সত্যচরণ, যিনি একজন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি যুবক। কলকাতায় বেকার জীবনযাপনে ক্লান্ত হয়ে, সত্যচরণ তাঁর বন্ধু রমেশের পরামর্শে ছোটনাগপুরের পালামৌ জেলার লোবতুলিয়া নামক স্থানে চলে আসেন। সেখানে তিনি প্রাচীন টিকর সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুসন্ধান করার কাজে নিযুক্ত হন।

লোবতুলিয়ার প্রত্যন্ত বনাঞ্চলে থাকতে থাকতে সত্যচরণের মধ্যে ধীরে ধীরে প্রকৃতির প্রতি একটি গভীর ভালোবাসা জন্মায়। উপন্যাসে রয়েছে বনজীবনের বিস্তৃত বর্ণনা, বিভিন্ন ঋতুতে অরণ্যের রূপ বদল, পাহাড়ি আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, বন্য প্রাণীদের আচরণ ইত্যাদি। সত্যচরণ ধীরে ধীরে শহুরে মানসিকতা থেকে মুক্ত হয়ে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে যান।

উপন্যাসটিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্কের পুনঃস্থাপন। সত্যচরণ বুঝতে পারেন যে আধুনিক সভ্যতার যান্ত্রিক জীবন থেকে প্রকৃতির কাছে ফিরে আসাই মানুষের আসল মুক্তি। এই উপন্যাস থেকে পাঠক অনুভব করেন যে সত্যিকারের আনন্দ কোথায় – আমাদের চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশে, প্রকৃতির নিয়মে বাঁচার মধ্যে।

উপন্যাসের শেষে সত্যচরণ যখন তার প্রাথমিক অনুসন্ধান কার্য শেষ করে কলকাতায় ফিরে যাবার সময় আসে, তখন তিনি অনুভব করেন যে কলকাতার ব্যস্ত জীবনে ফিরে গিয়ে তিনি আর বনাঞ্চলের শান্তি-সুন্দর পরিবেশকে ভুলতে পারবেন না। এভাবে উপন্যাসটি জীবনের প্রতি, প্রকৃতির প্রতি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়।

আরণ্যক উপন্যাসের পটভূমি

‘আরণ্যক’ উপন্যাসের পটভূমি হল বর্তমান ঝাড়খণ্ডের পালামৌ জেলা, যা তৎকালীন বিহার রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। ১৯৩৪-৩৭ সালের মধ্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এই অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক কাজে যুক্ত ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই উপন্যাসটি রচিত হয়েছিল, তাই এটি অর্ধ-আত্মজীবনীমূলক রচনা হিসেবে পরিচিত।

উপন্যাসের পটভূমি দুটি প্রধান স্থানে বিন্যস্ত – কলকাতা এবং লোবতুলিয়া (পালামৌ)। প্রথম অংশে কলকাতার শহুরে পরিবেশ, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক সংকট এবং সেই সময়ের মধ্যবিত্ত জীবনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয় ও প্রধান অংশে রয়েছে পালামৌর বনাঞ্চল, পাহাড়, নদী, ঘন অরণ্য এবং সেখানকার আদিবাসীদের জীবনযাপন।

উপন্যাসটির সময়কাল ছিল ব্রিটিশ ভারতের শেষ পর্ব, ১৯৩০-এর দশক। এই সময়ে বাংলার মধ্যবিত্ত সমাজে বেকারত্ব একটি প্রধান সমস্যা ছিল। অন্যদিকে, আদিবাসী জনজাতি এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের জীবন ছিল শহুরে সভ্যতা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। লেখক এই দুই বিপরীত জীবনধারার মধ্যে সেতুবন্ধন করেছেন সত্যচরণের চরিত্রের মাধ্যমে।

উপন্যাসে সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে প্রকৃতি – বিশেষত বনাঞ্চলের প্রকৃতি। বিভূতিভূষণের অসাধারণ প্রকৃতি বর্ণনার ক্ষমতার কারণে লোবতুলিয়ার বন, পাহাড়, নদী, পশু-পাখি, গাছপালা সবকিছুই যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে উপন্যাসে। এই বর্ণনাগুলি এতই জীবন্ত যে পাঠক নিজেই যেন একটি সবুজ, শান্ত অরণ্যে হাঁটছেন, এমন অনুভূতি জাগে।

আরণ্যকের প্রধান চরিত্রসমূহ

সত্যচরণ

উপন্যাসের নায়ক, একজন শিক্ষিত বাঙালি যুবক। কলকাতায় বেকার থাকার পর লোবতুলিয়া পাহাড়ি এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক কাজে যান। প্রকৃতিপ্রেমী, চিন্তাশীল এবং পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা সম্পন্ন। প্রকৃতির সাথে যোগাযোগের ফলে তার মধ্যে ধীরে ধীরে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসে।

রমেশ

সত্যচরণের বন্ধু যিনি তাকে লোবতুলিয়ায় যাওয়ার প্রস্তাব দেন। তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের সাথে যুক্ত এবং প্রাচীন টিকর সভ্যতার অবশেষ খুঁজে বের করার কাজে নিয়োজিত।

ঝুনকা

আদিবাসী যুবতী, যার সাথে সত্যচরণের সাক্ষাৎ হয়। তার মাধ্যমে সত্যচরণ আদিবাসী জীবন ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হন। ঝুনকার সহজ-সরল জীবনযাপন সত্যচরণকে আকৃষ্ট করে।

শিবনাথ বাবু

সরকারি কর্মচারী, যিনি অনেক বছর ধরে এই অঞ্চলে বসবাস করেন। তিনি সত্যচরণকে স্থানীয় জীবন, সংস্কৃতি এবং পরিবেশ সম্পর্কে অনেক তথ্য দেন।

ধন্না ওঝা

আদিবাসী সমাজের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি, যিনি স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের জীবন্ত প্রতীক। তার মাধ্যমে লেখক আদিবাসী সমাজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন।

আরণ্যক উপন্যাসের উল্লেখযোগ্য কিছু উক্তি

“প্রকৃতির কাছে ফিরিয়া আসিতে হইবে সভ্যতার ভূলিয়া যাওয়া পাঠ আবার শিখিবার জন্য। শাল-মহুয়ার জঙ্গলে রাত্রিতে বাতাসের শনশন শব্দ শুনিয়া ভয় ভুলিয়া যাইতে হইবে। পাহাড়ের দুর্গম গহ্বরে প্রবেশ করিয়া পাথরের দেওয়ালে আঁকা অজানা সভ্যতার হাজার বছরের পুরানো ছবি দেখিয়া প্রাচীন যুগের ঐশ্বর্যশালী সভ্যতার আভাস পাইতে হইবে।”

– আরণ্যক

“এই যে এত বড় চাঁদ উঠিয়াছে পাহাড়ের মাথায়, ইহার আলোয় সমস্ত অরণ্য, পাহাড়, পর্বত, ভূমি ছায়ালোকময়। মনে হয় এই সমস্ত চারিদিকের দৃশ্য যেন কোন দেবতার স্বপ্ন। আর আমরা এই পৃথিবীর মানুষ ঘুমাইতেছি এবং আমাদের স্বপ্নের মাঝে আসিয়া প্রবেশ করিয়াছে এই দেবতার স্বপ্ন।”

– আরণ্যক

“পাখি, জন্তু, গাছপালা, নদী, পাহাড়-পর্বত – ইহাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে মিশিয়া গিয়া উপলব্ধি করিলাম মানুষ হইবার অভিশাপ। নিজের যৌবন, সারল্য, অনুভূতির তীব্রতা লইয়া সমস্ত পৃথিবীর এই বিরাট, নিঃশব্দ, প্রাণময় জীবনধারার মধ্যে আসিয়া আপনাকে হারাইয়া ফেলিবার মত আনন্দ আর কোথায় আছে?”

– আরণ্যক

“একই সময়ে আমি স্বার্থপর কলকাতার ধূলিময় আবহাওয়ায় গড়িয়া উঠিতেছি না, ফুলের মধু যেমন করিয়া মৌমাছি তৈরি করে, তেমনি করিয়া নির্জন অরণ্যের নিঃশব্দ প্রশান্তির মধ্যে আমার জীবনের তেজ ও স্বাদ গড়িয়া উঠিতেছে।”

– আরণ্যক

আরণ্যকের প্রভাব ও দীর্ঘস্থায়ী আবেদন

‘আরণ্যক’ প্রকাশের সময় থেকেই বাংলা সাহিত্যে এক অভিনব দিকনির্দেশের সূচনা করেছিল। এই উপন্যাস প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আজ থেকে প্রায় ৮৫ বছর আগে লেখা হলেও পরিবেশ সংরক্ষণ, আদিবাসী সংস্কৃতি, এবং প্রকৃতির সাথে মানুষের সুসম্পর্ক – এই বিষয়গুলি বর্তমান সময়ে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

বর্তমান প্রজন্মের কাছে ‘আরণ্যক’ শুধু একটি উপন্যাস নয়, একটি পথনির্দেশক। শহরায়ণ, কৃত্রিম জীবনযাপন, প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্নতা – এই সমস্যাগুলির মধ্যে ‘আরণ্যক’ পাঠকদের প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার এক গভীর অনুভূতি জাগায়। গ্লোবাল ওয়ার্মিং, প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয়, জৈববৈচিত্র্য হারানোর সময়ে এই উপন্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মারক হিসেবে কাজ করে।

অনেক পাঠক ‘আরণ্যক’ পড়ার পর প্রকৃতির প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে শুরু করেছেন। বনভ্রমণ, প্রাকৃতিক স্থানে বসবাস, এবং সাধারণভাবে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবেশবিদরা প্রায়ই এই উপন্যাসকে একটি পাঠ্যক্রম হিসাবে ব্যবহার করেন পরিবেশ শিক্ষায়।

সাহিত্য সমালোচকরা ‘আরণ্যক’-কে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা প্রকৃতি-কেন্দ্রিক রচনা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বিভূতিভূষণের প্রকৃতি বর্ণনা, তার কাব্যিক ভাষা, এবং মানব-প্রকৃতি সম্পর্কের গভীর বিশ্লেষণ সাহিত্যের ইতিহাসে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। পরিবেশ সাহিত্যের অগ্রদূত হিসেবে ‘আরণ্যক’ এর প্রভাব অনস্বীকার্য।

আরণ্যক PDF ডাউনলোড করুন

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অমর উপন্যাসটি আপনার কম্পিউটার, মোবাইল বা ট্যাবলেটে সংরক্ষণ করুন এবং যে কোন সময় পড়তে পারেন।

PDF ডাউনলোড করুন

উপসংহার

‘আরণ্যক’ উপন্যাস শুধু বাংলা সাহিত্যের নয়, বিশ্ব সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই রচনা থেকে আমরা শিখি প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে জীবন অন্যভাবে উপভোগ করার কথা। আধুনিক যুগে, যখন আমরা প্রযুক্তি ও শহুরে জীবনের ব্যস্ততায় হারিয়ে যাচ্ছি, তখন ‘আরণ্যক’ আমাদের মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতির দিকে ফিরে তাকানোর গুরুত্ব।

এই উপন্যাসটি যে কেবল একটি আখ্যান তাই নয়, এটি একটি জীবনদর্শন, একটি দৃষ্টিভঙ্গি। বিভূতিভূষণের অসাধারণ শব্দচয়ন, কাব্যিক বর্ণনা, এবং সহজ-সরল কাহিনী বুনন পাঠকের মন ছুঁয়ে যায়। পরিবেশ সংরক্ষণের এই যুগে ‘আরণ্যক’ একটি প্রাসঙ্গিক ও অনুপ্রেরণামূলক পাঠ হিসেবে আবিষ্কৃত হচ্ছে নতুন প্রজন্মের কাছে।

শেষ করার আগে বলা যায়, ‘আরণ্যক’ শুধু একটি কাহিনী নয়, এটি একটি অভিজ্ঞতা। এই উপন্যাস পড়ার সময় পাঠক যেন লোবতুলিয়ার জঙ্গলে হাঁটছেন, পাহাড়ের উপর থেকে সূর্যাস্ত দেখছেন, আদিবাসীদের সাথে কথা বলছেন – এমন এক অনুভূতি জাগে। “প্রকৃতির কাছে ফিরিয়া আসিতে হইবে” – এই বার্তাটি আজকের দিনেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক, হয়তো আরও বেশি, কারণ আমরা প্রকৃতি থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছি দিন দিন।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যান্য বিখ্যাত রচনা

পথের পাঁচালী

পথের পাঁচালী

চাঁদের পাহাড় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

চাঁদের পাহাড়

অপরাজিত

অপরাজিত

আদর্শ হিন্দু হোটেল

আদর্শ হিন্দু হোটেল

ইছামতী

ইছামতী

Latest articles

Related articles