‘টোটাল দাদাগিরি’ হল একটি জনপ্রিয় ভারতীয় বাংলা মুভি, যা ২০১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি মুক্তি পায়। এই সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন পাঠকৃত বসু এবং প্রযোজনা করেছে SVF এন্টারটেইনমেন্ট। এটি একটি পারিবারিক কমেডি-ড্রামা যা প্রেম, সম্পর্ক, এবং আত্মসম্মানের মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে। সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জিৎ, মিমি চক্রবর্তী, এবং রাজা গোস্বামী।
সিনেমার কাহিনি সংক্ষেপ:
সিনেমার গল্প শুরু হয় জয় (জিৎ) নামের একজন যুবকের জীবন নিয়ে। জয় একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছাত্র, যিনি পারিবারিক চাপ এবং নিজের স্বপ্নের মধ্যে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করছেন। তার প্রেমিকা রিয়া (মিমি চক্রবর্তী), একজন উচ্ছল এবং দায়িত্বশীল মেয়ে, যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে চান।
রিয়ার বাবা (রাজা গোস্বামী) একজন কঠোর এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি, যিনি তার মেয়ের জন্য সেরা জীবন চান। কিন্তু তিনি জয়কে তার মেয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্র মনে করেন না।
গল্পের মোড় আসে যখন জয় সিদ্ধান্ত নেয় রিয়ার বাবার মন জয়ের জন্য কিছু অবিশ্বাস্য পদক্ষেপ নিতে। এই প্রক্রিয়ায় উঠে আসে হাস্যকর এবং আবেগঘন মুহূর্ত, যা সিনেমাটিকে করে তোলে একটি সম্পূর্ণ পারিবারিক বিনোদন।
অভিনয় এবং চরিত্রায়ণ:
- জিৎ (জয়):
জিৎ তার অভিনয় দক্ষতা দিয়ে চরিত্রটিকে প্রাণবন্ত করেছেন। তার কমেডি টাইমিং, আবেগপ্রবণ মুহূর্ত এবং রিয়ার বাবার সঙ্গে দ্বন্দ্ব সিনেমার মূল আকর্ষণ। - মিমি চক্রবর্তী (রিয়া):
মিমি তার চিরচেনা উচ্ছল এবং কিউট চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। রিয়ার চরিত্রটি গল্পের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং জয়ের সঙ্গে তার রসায়ন দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। - রাজা গোস্বামী (রিয়ার বাবা):
রাজা গোস্বামী তার কঠোর অথচ ভালোবাসাপূর্ণ বাবার চরিত্রে প্রভাবশালী অভিনয় করেছেন। তার অভিনয় সিনেমার আবেগঘন দিকটিকে শক্তিশালী করেছে। - কাঞ্চন মল্লিক এবং অন্যান্য পার্শ্ব চরিত্র:
কাঞ্চন মল্লিকসহ অন্যান্য পার্শ্ব চরিত্রগুলো সিনেমাটির হাস্যরস যোগ করেছে এবং গল্পের গতিশীলতায় নতুন মাত্রা এনেছে।
গান এবং সঙ্গীত:
‘টোটাল দাদাগিরি’ সিনেমার গানগুলো এক কথায় চমৎকার। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন জুবিন গার্গ এবং সিনেমার প্রতিটি গান দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
- ‘তুই আমার হিরো’ গানটি:
এই রোমান্টিক গানটি সিনেমার মূল আকর্ষণ। জিৎ এবং মিমির রসায়ন গানটিকে আরও সুন্দর করেছে। - ‘টোটাল দাদাগিরি’ টাইটেল ট্র্যাক:
একটি উদ্যমী গান যা সিনেমার কমেডি এবং মজার দিকগুলো তুলে ধরে। - ব্যাকগ্রাউন্ড সঙ্গীত:
সিনেমার আবেগঘন মুহূর্তগুলোতে ব্যাকগ্রাউন্ড সঙ্গীত কাহিনিকে আরও শক্তিশালী করেছে।

ভিজ্যুয়াল এবং সিনেমাটোগ্রাফি:
সিনেমার চিত্রগ্রহণ এবং দৃশ্যপটগুলোর ডিজাইন প্রশংসনীয়। কলকাতার ব্যস্ত রাস্তা, গ্রামের মনোরম দৃশ্য এবং শহুরে জীবনের সজ্জা সিনেমাটিকে ভিজ্যুয়াল দিক থেকে সমৃদ্ধ করেছে।
পরিচালনা:
পাঠকৃত বসুর পরিচালনা দক্ষতা সিনেমাটির প্রতিটি অংশে দৃশ্যমান। গল্পের গতি বজায় রাখা এবং প্রতিটি চরিত্রের সঠিক উপস্থাপন নিশ্চিত করা তার পরিচালনার অন্যতম সাফল্য।
সিনেমার মূল আকর্ষণ:
- হাস্যরসেভরপুর অথচ একই সাথে আবেগের মিশ্রণ:
‘টোটাল দাদাগিরি’ একই সঙ্গে হাসির এবং আবেগঘন মুহূর্তগুলো তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। - পারিবারিক বার্তা:
সিনেমাটি পারিবারিক মূল্যবোধ, সম্পর্ক এবং আত্মসম্মানের একটি সুন্দর বার্তা দেয়। - অভিনয় এবং রসায়ন:
জিৎ এবং মিমির অভিনয় এবং তাদের রসায়ন সিনেমার বড় সম্পদ।
দুর্বলতা:
- কিছু জায়গায় গল্পের পূর্বানুমানযোগ্যতা।
- কমেডি দৃশ্যগুলো কখনো কখনো বেশি দীর্ঘ বলে মনে হতে পারে।
দর্শকদের প্রতিক্রিয়া:
‘টোটাল দাদাগিরি’ দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সিনেমাটি পারিবারিক দর্শকদের জন্য উপযুক্ত এবং এটি বক্স অফিসে সাফল্য অর্জন করেছে।
‘টোটাল দাদাগিরি’ একটি সম্পূর্ণ বিনোদনমূলক সিনেমা, যা পারিবারিক সম্পর্ক এবং প্রেমের গল্পের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। হাস্যরস, সঙ্গীত এবং আবেগঘন মুহূর্তের মিশ্রণে এটি দর্শকদের হৃদয় জয় করেছে।
যদি আপনি একটি মজার এবং আবেগপ্রবণ বাংলা সিনেমা দেখতে চান, তবে ‘টোটাল দাদাগিরি’ আপনার জন্য সেরা পছন্দ হতে পারে।