back to top

বসন্ত এসে গেছে মুভি

- Advertisement -

বসন্ত এসে গেছে মুভি

বসন্ত এসে গেছে মুভি: প্রকৃতির রঙে রাঙা এক সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা

সিনেমা ব্লগার

লেখক: সিনেমা বিশ্লেষক | প্রকাশ: এপ্রিল ২১, ২০২৫

বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে ‘বসন্ত এসে গেছে‘ একটি উল্লেখযোগ্য নাম। এই ছবিটি শুধু বাংলা সিনেমার ইতিহাসেই নয়, দর্শকদের হৃদয়েও এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। বসন্তকালের সৌন্দর্য, প্রকৃতির নবজাগরণ এবং মানব জীবনের নতুন শুরুর প্রতীক হিসেবে এই ছবিটি তার আবেদন বজায় রেখেছে বহু বছর ধরে। আজকের এই নিবন্ধে আমরা ‘বসন্ত এসে গেছে’ সিনেমার বিভিন্ন দিক, এর কাহিনী, অভিনেতা-অভিনেত্রী, সংগীত এবং এর সাংস্কৃতিক প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

বসন্ত এসে গেছে মুভি

৮.৫/১০ ⭐

মুভি তথ্য

পরিচালক: অনিকেত চট্টোপাধ্যায়
প্রধান চরিত্রে: অপু বিশ্বাস, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, রিতুপর্ণা সেনগুপ্তা
সংগীত: প্রীতম চক্রবর্তী
মুক্তির বছর: ২০২২
শৈলী: রোমান্টিক ড্রামা
ভাষা: বাংলা
রোমান্টিক
ড্রামা
প্রকৃতি
বসন্ত

চলচ্চিত্রের কাহিনী

‘বসন্ত এসে গেছে’ চলচ্চিত্রের কাহিনী ঘুরে বেড়ায় আদিত্য (অপু বিশ্বাস) নামে এক তরুণ কবি ও লেখকের জীবনকে ঘিরে, যে শহরের কোলাহল থেকে বেরিয়ে দার্জিলিং-এর একটি ছোট গ্রামে বসন্তকালে নিজের লেখা শেষ করতে এসেছে। সেখানে তার সাক্ষাৎ হয় মালিনী (সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়) নামের এক স্থানীয় স্কুল শিক্ষিকার সাথে, যিনি প্রকৃতি ও সাহিত্যের প্রতি গভীর আগ্রহী।

দুজনের মধ্যে একটি আকর্ষণ তৈরি হতে থাকে, কিন্তু আদিত্যের অতীতের এক সম্পর্কের ছায়া (রিতুপর্ণা সেনগুপ্তা) তাদের সম্পর্ককে জটিল করে তোলে। বসন্তের রঙিন পরিবেশের মধ্যে, প্রকৃতির নবজাগরণের সাথে সাথে আদিত্য নিজের অতীতের বেদনাদায়ক স্মৃতি থেকে মুক্তি খোঁজে এবং মালিনীর সাহচর্যে নতুন করে বাঁচতে শেখে।

ছবিটি কেবল একটি প্রেমের গল্প নয়, এটি আসলে আত্ম-আবিষ্কার, মুক্তি এবং নতুন শুরুর একটি যাত্রা। চলচ্চিত্রটিতে দার্জিলিং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বসন্তের রং-বেরঙের ফুল, এবং পাহাড়ের কুয়াশাচ্ছন্ন দৃশ্যগুলি বিশেষভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা কাহিনীকে আরও জীবন্ত করে তুলেছে।

প্রধান চরিত্রসমূহ

অপু বিশ্বাস

আদিত্য (অপু বিশ্বাস)

আদিত্য একজন সংবেদনশীল কবি ও লেখক, যে নিজের অতীতের বেদনা থেকে মুক্তি খুঁজছে। বসন্তের আগমনের সাথে তার জীবনেও আসে নতুন আশা ও সম্ভাবনা।

সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়

মালিনী (সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়)

মালিনী একজন সাহসী, আত্মবিশ্বাসী স্কুল শিক্ষিকা। প্রকৃতি ও সাহিত্যের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা আদিত্যকে আকর্ষিত করে এবং তাকে নতুন জীবন দেয়।

রিতুপর্ণা সেনগুপ্তা

অনামিকা (রিতুপর্ণা সেনগুপ্তা)

অনামিকা আদিত্যের অতীতের প্রেমিকা, যার স্মৃতি এখনও আদিত্যকে ছায়ার মতো অনুসরণ করে। তার চরিত্র ছবিতে ফ্ল্যাশব্যাক হিসেবে দেখা যায়।

সংগীত

‘বসন্ত এসে গেছে’ সিনেমাটির সংগীত নির্দেশনা করেছেন প্রীতম চক্রবর্তী, যার সুরারোপিত সংগীত ছবির মূল আবেগকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। ছবিটির টাইটেল ট্র্যাক “বসন্ত এসে গেছে রে” শ্রোতাদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এছাড়াও “ভালোবাসার রং”, “কুয়াশার আড়ালে”, এবং “ফিরে আসবো আমি” গানগুলি দর্শকদের হৃদয় জয় করেছে।

সিনেমাটির পটভূমি সংগীতও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা দার্জিলিং-এর প্রাকৃতিক পরিবেশকে আরও জীবন্ত করে তুলেছে। গানগুলির কথা লিখেছেন অনন্য দত্ত, এবং কণ্ঠ দিয়েছেন অরিজিৎ সিং, শ্রেয়া ঘোষাল, এবং নিখিতা গান্ধী। সিনেমাটির সংগীত সবচেয়ে বড় আকর্ষণগুলির মধ্যে একটি, যা দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে।

বসন্ত এসে গেছে রে

গায়ক: অরিজিৎ সিং

সুরকার: প্রীতম চক্রবর্তী

ভালোবাসার রং

গায়িকা: শ্রেয়া ঘোষাল

সুরকার: প্রীতম চক্রবর্তী

কুয়াশার আড়ালে

গায়ক: অরিজিৎ সিং, নিখিতা গান্ধী

সুরকার: প্রীতম চক্রবর্তী

চিত্রায়ন ও দৃশ্যকল্প

‘বসন্ত এসে গেছে’ চলচ্চিত্রটির চিত্রায়ন ও দৃশ্যকল্প অসাধারণ। সুবীর দাস, যিনি ছবিটির সিনেমাটোগ্রাফার, তিনি দার্জিলিংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অসামান্য দক্ষতার সাথে ক্যামেরাবন্দি করেছেন। বসন্তের সবুজ পাতা, রঙিন ফুল, সকালের কুয়াশা ও সূর্যাস্তের সোনালী আভা – সবকিছুই যেন ছবির কাহিনীর সাথে একাত্ম হয়ে গেছে।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল সকালের কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়, চা-বাগানের সবুজ সৌন্দর্য, এবং ফুলের বাগানের রঙিন দৃশ্যগুলি। ছবির দৃশ্যকল্প এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন প্রতিটি ফ্রেম একটি করে ছবি। পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় প্রকৃতি ও মানবীয় আবেগের সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন এমনভাবে যা দর্শকদের মনকে স্পর্শ করে।

দার্জিলিং দৃশ্য

পাহাড়ের কুয়াশাচ্ছন্ন দৃশ্য

বসন্তের ফুল

বসন্তের রঙিন ফুল

চা বাগান

দার্জিলিংয়ের চা বাগান

সমালোচনা ও দর্শক প্রতিক্রিয়া

সমালোচক রেটিং

৪.৫/৫

“প্রকৃতি ও মানবীয় আবেগের অসাধারণ সমন্বয়”

IMDb রেটিং

৮.৫/১০

“২০২২ সালের সেরা বাংলা চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে একটি”

দর্শক রেটিং

৯/১০

“দর্শকদের হৃদয় জয় করেছে এই ছবি”

সমালোচকদের মতামত

‘বসন্ত এসে গেছে’ শুধু একটি প্রেমের গল্প নয়, এটি মানুষের আত্ম-আবিষ্কারের কাহিনী। অপু বিশ্বাস ও সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয় ছবিটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনা, সুবীর দাসের চিত্রায়ন, এবং প্রীতম চক্রবর্তীর সংগীত – সবকিছু মিলে এক অবিস্মরণীয় সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা তৈরি হয়েছে।

– আনন্দবাজার পত্রিকা

দার্জিলিংয়ের মনোরম পরিবেশে ছবিটি আমাদের নিয়ে যায় এক কাব্যিক যাত্রায়। বসন্তের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মানবীয় সম্পর্কের জটিলতা অসাধারণভাবে ফুটে উঠেছে। ২০২২ সালের অন্যতম সেরা বাংলা ছবি।

– দি টাইমস অফ ইন্ডিয়া

প্রভাব ও উত্তরাধিকার

‘বসন্ত এসে গেছে’ ছবিটি আধুনিক বাংলা সিনেমার ধারায় একটি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। এর প্রধান প্রভাবগুলি হল:

পর্যটন প্রভাব

ছবিটি মুক্তির পর দার্জিলিংয়ে পর্যটকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক দর্শক ছবিতে দেখানো লোকেশনগুলি দেখতে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

সিনেমাটিক প্রভাব

ছবিটির অসাধারণ চিত্রায়ন ও আবহ অন্য অনেক বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অনুপ্রাণিত করেছে। এর পরে অনেক ছবি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।

সাংস্কৃতিক প্রভাব

ছবিটির সংগীত, বিশেষ করে “বসন্ত এসে গেছে রে” গানটি, বাংলা সংগীতের জগতে এক নতুন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছে।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি: ছবিটি বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে এবং বেশ কয়েকটি পুরস্কার অর্জন করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘সেরা বাংলা ফিচার ফিল্ম’, ‘সেরা চিত্রায়ন’, এবং ‘সেরা পরিচালক’। এছাড়াও অপু বিশ্বাস ও সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় উভয়েই তাদের অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন।

কোথায় দেখবেন

Netflix

নেটফ্লিক্স

সাবস্ক্রিপশন প্ল্যাটফর্মে দেখুন

Hoichoi

হইচই

বাংলা কনটেন্ট স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম

Amazon Prime

অ্যামাজন প্রাইম

অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম

‘বসন্ত এসে গেছে’ ছবিটি এখন উপরোক্ত প্ল্যাটফর্মগুলিতে স্ট্রিম করা যাচ্ছে। এছাড়াও, বিভিন্ন অনলাইন ভিডিও রেন্টাল সার্ভিসে ছবিটি ভাড়া নিয়ে দেখা যাবে। ছবিটি দেখার জন্য আপনার পছন্দের প্ল্যাটফর্মে সাবস্ক্রাইব করুন বা ভাড়া নিন।

উপসংহার: একটি অবিস্মরণীয় বসন্তের গল্প

‘বসন্ত এসে গেছে’ চলচ্চিত্রটি বাংলা সিনেমার ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অধ্যায়। এর মনোরম দৃশ্যকল্প, হৃদয়স্পর্শী অভিনয়, সুন্দর সংগীত, এবং আবেগপূর্ণ কাহিনী দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। বসন্তের সৌন্দর্য ও নবজাগরণের প্রতীক হিসেবে এই ছবিটি জীবনের নতুন শুরুর বার্তা দেয়।

অপু বিশ্বাস ও সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয় দক্ষতা, পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের দূরদর্শী পরিচালনা, সুবীর দাসের অসাধারণ চিত্রায়ন, এবং প্রীতম চক্রবর্তীর মনোমুগ্ধকর সংগীত – সবকিছু মিলে ‘বসন্ত এসে গেছে’ হয়ে উঠেছে একটি পূর্ণাঙ্গ সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা।

যদি আপনি প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানবীয় সম্পর্কের জটিলতা, এবং নতুন শুরুর গল্প ভালোবাসেন, তাহলে ‘বসন্ত এসে গেছে’ ছবিটি অবশ্যই দেখার যোগ্য। এটি শুধু একটি চলচ্চিত্র নয়, এটি একটি অনুভূতি, একটি অভিজ্ঞতা যা আপনাকে বসন্তের মতোই নতুন করে বাঁচতে অনুপ্রাণিত করবে।

বসন্ত এসে গেছে মুভি
বাংলা চলচ্চিত্র
দার্জিলিং
অপু বিশ্বাস
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়


বসন্ত এসে গেছে মুভি সিন

Latest articles

Related articles