back to top

বাংলাদেশের সিনেমা হলের তালিকা

- Advertisement -
 

বাংলাদেশের সিনেমা হলের তালিকা

আপনাকে স্বাগতম! বাংলাদেশের সিনেমা জগতের সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে আমাদের সাথে থাকুন।

 

ভূমিকা: বাংলাদেশে সিনেমা হলের ইতিহাস

বাংলাদেশের সিনেমা হলের তালিকা

বাংলাদেশের সিনেমা হলের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। বাংলাদেশে সিনেমা হলের যাত্রা শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। ১৯১০ সালে ঢাকার নবাবপুরে প্রথম সিনেমা হল ‘পিকচার হাউস’ প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে সিনেমা শিল্পের বিকাশের সাথে সাথে সিনেমা হলগুলোর সংখ্যা ও মান বৃদ্ধি পেতে থাকে।

৭০ এর দশকে বাংলাদেশে প্রায় ১,২০০ টিরও বেশি সিনেমা হল ছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশে সক্রিয় সিনেমা হলের সংখ্যা মাত্র ২০০ এর কাছাকাছি নেমে এসেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির আগমন, ইন্টারনেট ও OTT প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি, এবং সিনেমার মানের অবনতির কারণে অনেক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে।

i

তথ্যসূত্র অনুযায়ী, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে মোট ১,১৯৭ টি সিনেমা হল ছিল, যেখানে ২০২৪ সালে তা কমে ২০০ এর নিচে নেমে এসেছে। তবে আধুনিক মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলগুলোর আগমনে ধীরে ধীরে সিনেমা দেখার সংস্কৃতি আবার ফিরে আসছে।

বাংলাদেশে সিনেমা হল গড়ে ওঠার ইতিহাসে দেখা যায়, ১৯৬০ এর দশকে প্রতি বছর গড়ে ২০-২৫টি নতুন সিনেমা হল নির্মিত হতো। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অনেক সিনেমা হল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু পরবর্তী দশকে সেগুলো আবার পুনর্নিমাণ করা হয়।

১৯৮০-৯০ এর দশকে প্রাদেশিক শহরগুলোতেও অনেক সিনেমা হল ছিল। প্রতিটি জেলা শহরে কমপক্ষে ৫-৬টি সিনেমা হল ছিল, যেখানে এখন অনেক জেলা শহরে একটিও সক্রিয় সিনেমা হল নেই।

ঢাকার প্রধান সিনেমা হলসমূহ

ঢাকা শহরে বর্তমানে প্রায় ৪০টি সক্রিয় সিনেমা হল রয়েছে। এর মধ্যে কিছু ঐতিহাসিক ও জনপ্রিয় সিনেমা হল নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

 

মধুমিতা সিনেমা হল

ঢাকার অন্যতম প্রাচীন ও জনপ্রিয় সিনেমা হল। এটি ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ৬৮০ আসন সংখ্যা নিয়ে এখনও সক্রিয় রয়েছে।

অবস্থান: মতিঝিল, ঢাকা
প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৬৫
আসন সংখ্যা: ৬৮০
স্ক্রিন: ১টি
 

বলাকা সিনেমা হল

নিউ মার্কেট এলাকায় অবস্থিত এই সিনেমা হলটি ১৯৫৭ সালে স্থাপিত হয় এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর সিনেমা হলগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হয়।

অবস্থান: নিউ মার্কেট, ঢাকা
প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৫৭
আসন সংখ্যা: ৭৫০
স্ক্রিন: ১টি
 

শ্যামলী সিনেমা হল

মোহাম্মদপুরে অবস্থিত শ্যামলী সিনেমা হল ১৯৬৮ সালে নির্মিত হয়। এটি মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দর্শকদের জন্য জনপ্রিয় একটি সিনেমা হল।

অবস্থান: মোহাম্মদপুর, ঢাকা
প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৬৮
আসন সংখ্যা: ৬০০
স্ক্রিন: ১টি
 

রাজমনি সিনেমা হল

ঢাকার পুরান শহরে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক সিনেমা হলটি ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি সেই সময়ের স্থাপত্য শৈলী সংরক্ষণ করে আছে।

অবস্থান: পুরান ঢাকা
প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৬৩
আসন সংখ্যা: ৫৫০
স্ক্রিন: ১টি
 

নাজ সিনেম্যা এভিনিউ

আধুনিক সুবিধাসহ এই সিনেমা হলটি ২০০০ সালের প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি মধ্যম আয়ের দর্শকদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

অবস্থান: নিউ ইস্কাটন, ঢাকা
প্রতিষ্ঠাকাল: ২০০১
আসন সংখ্যা: ৩৫০
স্ক্রিন: ১টি

চট্টগ্রামের সিনেমা হলসমূহ

চট্টগ্রাম, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, যেখানে বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক ও জনপ্রিয় সিনেমা হল রয়েছে:

 

সুগন্ধা সিনেমা হল

চট্টগ্রামের সবচেয়ে পুরাতন ও জনপ্রিয় সিনেমা হলগুলোর একটি। এটি ১৯৬২ সালে স্থাপিত হয়েছিল এবং আজও দর্শকদের আকর্ষণ করে।

অবস্থান: চকবাজার, চট্টগ্রাম
প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৬২
আসন সংখ্যা: ৮০০
স্ক্রিন: ১টি
 

উপসাগর সিনেমা হল

চট্টগ্রামের জনপ্রিয় সিনেমা হল উপসাগর ১৯৭৯ সালে নির্মিত হয়। এর স্থাপত্য ডিজাইন ও আধুনিক সুবিধাদি এটিকে অন্যান্য সিনেমা হল থেকে আলাদা করেছে।

অবস্থান: নিউ মার্কেট, চট্টগ্রাম
প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৭৯
আসন সংখ্যা: ৭২০
স্ক্রিন: ১টি

বিভাগভিত্তিক সিনেমা হলের তালিকা

বাংলাদেশের আটটি বিভাগে ছড়িয়ে থাকা প্রধান সিনেমা হলগুলোর তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো:

ঢাকা বিভাগের প্রমুখ সিনেমা হলসমূহ

  • মধুমিতা ঢাকা
  • বলাকা ঢাকা
  • রাজমনি ঢাকা
  • বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্স ঢাকা
  • জনতা টাঙ্গাইল
  • পূর্বরঙ্গ নারায়ণগঞ্জ

চট্টগ্রাম বিভাগের প্রমুখ সিনেমা হলসমূহ

  • সুগন্ধা চট্টগ্রাম
  • উপসাগর চট্টগ্রাম
  • সিলভার স্ক্রিন চট্টগ্রাম
  • গুলশান কুমিল্লা
  • ফিনিক্স কক্সবাজার

রাজশাহী বিভাগের প্রমুখ সিনেমা হলসমূহ

  • নূর তাজমহল রাজশাহী
  • আনন্দলোক রাজশাহী
  • লক্ষ্মী নাটোর
  • রূপবানী পাবনা
  • সোনালি বগুড়া

খুলনা বিভাগের প্রমুখ সিনেমা হলসমূহ

  • লিবার্টি খুলনা
  • আলাদিন খুলনা
  • রূপসা খুলনা
  • সাগরিকা যশোর
  • অনিন্দিতা সাতক্ষীরা

সাধারণ জিজ্ঞাসা

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কোন সিনেমা হল প্রতিষ্ঠিত হয়?

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সিনেমা হল ১৯১০ সালে ঢাকার নবাবপুরে ‘পিকচার হাউস’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয়েছিল এবং বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের প্রথম মাইলফলক।

বর্তমানে বাংলাদেশে কত সিনেমা হল আছে?

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২০০ টি সক্রিয় সিনেমা হল আছে। অতীতে এই সংখ্যা ১,২০০ এর বেশি ছিল। OTT প্ল্যাটফর্ম, টেলিভিশন চ্যানেল এবং অন্যান্য মনোরঞ্জন মাধ্যমের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণে সিনেমা হলের সংখ্যা কমে গেছে।

বাংলাদেশের প্রথম মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল কোনটি?

বাংলাদেশের প্রথম মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল হলো ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’ যা ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশে আধুনিক সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যায় এবং সিনেমা হল ব্যবসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

সিনেমা হলের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ কী?

সিনেমা হলের সংখ্যা কমে যাওয়ার কয়েকটি প্রধান কারণ হলো:

  • ডিজিটাল প্রযুক্তির আগমন ও OTT প্ল্যাটফর্মের (Netflix, Amazon Prime, Hoichoi) জনপ্রিয়তা
  • সিনেমার মানের অবনতি ও দর্শক হারানো
  • টিভি চ্যানেলে সিনেমা প্রদর্শন
  • ভিসিপি/ডিভিডি/অনলাইন পাইরেসি
  • সিনেমা হলগুলোর অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও আধুনিকায়নের অভাব

ঢাকার বাইরে কোন শহরে সবচেয়ে বেশি সিনেমা হল আছে?

ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম শহরে সবচেয়ে বেশি সিনেমা হল আছে, যা প্রায় ১৫টি। এরপর রয়েছে খুলনা (৮টি), রাজশাহী (৭টি) ও সিলেট শহর (৬টি)। বাংলাদেশের অধিকাংশ বড় শহরে অন্তত একটি সিনেমা হল পাওয়া যায়।

উপসংহার

বাংলাদেশের সিনেমা হলগুলো দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই সিনেমা হলগুলো শুধু মনোরঞ্জনের স্থান নয়, বরং এগুলো আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস ও সামাজিক বিবর্তনের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।

যদিও বর্তমানে OTT প্ল্যাটফর্ম ও ডিজিটাল যুগের প্রভাবে সিনেমা হলগুলো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তবুও মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলগুলোর আগমন এবং মানসম্পন্ন সিনেমা নির্মাণের প্রচেষ্টা আমাদের আশাবাদী করে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশের প্রাচীন সিনেমা হলগুলো সংরক্ষণ ও নতুন প্রযুক্তিসমৃদ্ধ সিনেমা হল নির্মাণের মাধ্যমে এই শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব।

বাংলাদেশী সিনেমা দেখুন, সিনেমা শিল্পকে বাঁচান!

আমাদের দেশীয় সিনেমা শিল্পের উন্নয়নে আপনার অবদান রাখুন। নিকটস্থ সিনেমা হলে গিয়ে বাংলাদেশী সিনেমা উপভোগ করুন।

সিনেমা হল শুধু একটি ভবন নয়, এটি একটি অভিজ্ঞতা, একটি স্মৃতি, একটি ঐতিহ্য। আসুন, আমরা সবাই মিলে দেশের সিনেমা হলগুলোকে বাঁচিয়ে রাখি এবং আমাদের সিনেমা শিল্পকে সমৃদ্ধ করি।

 

Latest articles

Related articles