back to top

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (NTRCA): সম্পূর্ণ গাইড

- Advertisement -

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (NTRCA): সম্পূর্ণ গাইড

📅 আপডেট: মে ২০২৩
⏱️ পড়তে সময় লাগবে: ১০ মিনিট


শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা একজন শিক্ষকের পেশাগত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ

ভূমিকা

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (Non-Government Teachers’ Registration and Certification Authority বা NTRCA) বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি মান নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি সংস্থা। এর প্রধান দায়িত্ব হল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বা নিয়োগ প্রত্যাশী শিক্ষকদের যোগ্যতা যাচাই করে নিবন্ধন প্রদান করা এবং শিক্ষকদের পেশাগত মান নিশ্চিত করা।

দেশের বেসরকারি শিক্ষা খাতে একটি সুশৃঙ্খল, যোগ্যতাভিত্তিক এবং স্বচ্ছ নিয়োগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০০৫ সালে এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের কলেজ, মাদ্রাসা, ও স্কুল পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য এনটিআরসিএ’র নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এনটিআরসিএ সনদ বাধ্যতামূলক; একজন শিক্ষকের এই সনদ না থাকলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া এবং এমপিও ভুক্ত হওয়া সম্ভব নয়।

ইতিহাস ও পটভূমি

বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষা খাতে দীর্ঘকাল ধরে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি এবং দুর্নীতি বিদ্যমান ছিল। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের গুণগত মান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সালে “বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০০৫” প্রণয়ন করে। এর মাধ্যমে, ১৯ জুলাই ২০০৫ সালে এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এনটিআরসিএ প্রতিবছর বেসরকারি স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসা পর্যায়ের শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা আয়োজন করে আসছে। ২০০৬ সালে প্রথম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং তারপর থেকে এ পর্যন্ত ১৮ টিরও বেশি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে এনটিআরসিএ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।

শিক্ষক প্রশিক্ষণ

যোগ্য শিক্ষক প্রস্তুতি একটি শিক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড

পরীক্ষা কক্ষ

নিবন্ধন পরীক্ষা বেসরকারি শিক্ষকদের যোগ্যতা যাচাই করে

এনটিআরসিএ’র প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ, যা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে, এই সংস্থা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।

সাংগঠনিক কাঠামো

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) একটি নির্দিষ্ট সাংগঠনিক কাঠামোর অধীনে পরিচালিত হয়। এর নেতৃত্বে থাকেন একজন চেয়ারম্যান, যিনি সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হন। কর্তৃপক্ষের সাংগঠনিক কাঠামো নিম্নরূপ:

পদবি দায়িত্ব
চেয়ারম্যান এনটিআরসিএ’র সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান
সদস্য (প্রশাসন) প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা
সদস্য (পরীক্ষা) শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা পরিচালনা সংক্রান্ত কার্যক্রম
সচিব সাচিবিক দায়িত্ব পালন
পরিচালক বিভিন্ন বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা
উপ-পরিচালক নির্দিষ্ট বিভাগের অধীনে কার্যক্রম পরিচালনা
সহকারী পরিচালক নির্দিষ্ট কাজের জন্য সহায়তা প্রদান

এছাড়াও, এনটিআরসিএ’তে বিভিন্ন শাখা যেমন পরীক্ষা শাখা, প্রশাসন শাখা, অর্থ ও হিসাব শাখা, আইসিটি শাখা ইত্যাদি রয়েছে। প্রতিটি শাখা নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করে থাকে। কর্তৃপক্ষের সদর দপ্তর ঢাকায় অবস্থিত এবং এখান থেকেই সমগ্র দেশে এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

সরকারি তত্ত্বাবধান:

এনটিআরসিএ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংস্থাটির নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে সহায়তা করে থাকে।

নিবন্ধন প্রক্রিয়া

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য এনটিআরসিএ’র নিবন্ধন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। নিবন্ধন প্রক্রিয়া মূলত দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়:

  1. প্রাথমিক নিবন্ধন পরীক্ষা: এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে প্রার্থী মূল নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করেন।
  2. মূল নিবন্ধন পরীক্ষা: প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং উত্তীর্ণ হলে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ প্রাপ্ত হন।

এনটিআরসিএ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া নিম্নরূপ:

আবেদন প্রক্রিয়া

  1. অনলাইন আবেদন: এনটিআরসিএ’র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (ntrca.gov.bd) এ গিয়ে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করতে হয়।
  2. আবেদন ফি প্রদান: নির্ধারিত আবেদন ফি সোনালী ব্যাংকের বিশেষ শাখায় অথবা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রদান করতে হয়।
  3. ডাউনলোড ও প্রিন্ট: আবেদন সম্পন্ন হলে, আবেদনকারী অনলাইন থেকে প্রবেশপত্র ডাউনলোড ও প্রিন্ট করে নিতে পারেন।
  4. পরীক্ষায় অংশগ্রহণ: নির্ধারিত তারিখে প্রবেশপত্র সহ পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়।
  5. ফলাফল প্রকাশ: পরীক্ষার ফলাফল এনটিআরসিএ’র ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

প্রাথমিক ও মূল উভয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে, প্রার্থীকে শিক্ষক নিবন্ধন সনদের জন্য আবেদন করতে হয়। সনদ প্রাপ্তির পর প্রার্থী বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য যোগ্য বিবেচিত হন। এনটিআরসিএ সনদধারী শিক্ষকরাই কেবল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত হতে পারেন।

স্কুল পর্যায়ের নিবন্ধন

  • মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য
  • স্নাতক/স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রীধারীদের জন্য উপযুক্ত
  • ১৬তম গ্রেডে নিয়োগের যোগ্যতা

কলেজ পর্যায়ের নিবন্ধন

  • উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের শিক্ষকদের জন্য
  • স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারীদের জন্য উপযুক্ত
  • ১০ম গ্রেডে নিয়োগের যোগ্যতা

পরীক্ষা পদ্ধতি

এনটিআরসিএ’র শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দুটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়: প্রাথমিক পরীক্ষা এবং মূল পরীক্ষা। উভয় পরীক্ষার বিষয়বস্তু ও পদ্ধতি নিম্নরূপ:

প্রাথমিক পরীক্ষা

বিষয় প্রশ্ন সংখ্যা মোট নম্বর সময়
সাধারণ বাংলা ২০ ২০ ১ ঘণ্টা
সাধারণ ইংরেজি ২০ ২০
সাধারণ গণিত ও যুক্তি ১০ ১০
সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক) ২৫ ২৫
শিক্ষা ও শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়াবলি ২৫ ২৫
মোট ১০০ ১০০

প্রাথমিক পরীক্ষায় পাস মার্ক: ৫০% (৫০ নম্বর)

মূল পরীক্ষা

বিষয় মোট নম্বর সময়
বাংলা ৩৫ ৩ ঘণ্টা
ইংরেজি ৩৫
বিষয়ভিত্তিক (ঐচ্ছিক বিষয়) ৮০
মোট ১৫০

মূল পরীক্ষায় পাস মার্ক: ১৫০ নম্বরের মধ্যে ৬০% (৯০ নম্বর)

মূল পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নপত্রে প্রার্থীর স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্নের ধরন সাধারণত MCQ (বহুনির্বাচনী) এবং লিখিত উভয় ধরনের হয়ে থাকে। পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রাথমিক পরীক্ষায় ন্যূনতম ৫০% এবং মূল পরীক্ষায় ন্যূনতম ৬০% নম্বর প্রয়োজন।

জেনে রাখুন:

এনটিআরসিএ পরীক্ষার সিলেবাস আপডেট হতে পারে। নতুন পরীক্ষার জন্য আবেদন করার আগে সর্বদা আপডেটেড সিলেবাস চেক করুন। এনটিআরসিএ’র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (ntrca.gov.bd) থেকে সর্বশেষ সিলেবাস ও পরীক্ষা পদ্ধতি জানতে পারবেন।

যোগ্যতা ও শর্তাবলী

এনটিআরসিএ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রার্থীদের নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও শর্তাবলী পূরণ করতে হয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স, ও অন্যান্য শর্তাবলী বিভিন্ন ক্যাটাগরির জন্য ভিন্ন ভিন্ন। নিম্নে বিভিন্ন ক্যাটাগরির জন্য যোগ্যতার বিবরণ দেওয়া হলো:

স্কুল পর্যায় (১৬তম গ্রেড)

শিক্ষাগত যোগ্যতা:

  • ন্যূনতম স্নাতক/স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি
  • এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ/জিপিএ ২.০
  • স্নাতক/স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণি/জিপিএ ২.৫০

কলেজ পর্যায় (১০ম গ্রেড)

শিক্ষাগত যোগ্যতা:

  • ন্যূনতম স্নাতকোত্তর ডিগ্রি
  • এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ/জিপিএ ২.০
  • স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উভয় পর্যায়ে ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণি/জিপিএ ২.৫০

সাধারণ শর্তাবলী

  • বয়স: ৩০ বছরের বেশি বয়সী প্রার্থীরা সাধারণত আবেদন করতে পারেন না (তবে বিশেষ ক্ষেত্রে বয়স শিথিলযোগ্য)
  • নাগরিকত্ব: বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে
  • চাকরিরত প্রার্থী: বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বয়স শিথিলযোগ্য
  • শারীরিক যোগ্যতা: শারীরিকভাবে সুস্থ ও শিক্ষকতার জন্য উপযুক্ত হতে হবে

উল্লেখ্য যে, NTRCA কর্তৃক প্রদত্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যোগ্যতা ও শর্তাবলী পরিবর্তন হতে পারে। তাই, আবেদন করার আগে সর্বদা সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত যোগ্যতা ও শর্তাবলী নিশ্চিত করে নিন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

শিক্ষক নিবন্ধন সনদ প্রাপ্তির জন্য প্রাথমিক ও মূল উভয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক। শুধুমাত্র প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে নিবন্ধন সনদ পাওয়া যাবে না।

এনটিআরসিএ’র গুরুত্ব

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর গুরুত্ব নিম্নলিখিত দিকগুলোতে অনুভূত হয়:

শিক্ষকদের মান নিশ্চিতকরণ

এনটিআরসিএ পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষকদের যোগ্যতা যাচাই করা হয়। এতে করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উচ্চ মানের, যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত হয়, যা শিক্ষার মান উন্নয়নে সহায়তা করে।

স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া

এনটিআরসিএ’র কারণে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া অধিক স্বচ্ছ ও মেধাভিত্তিক হয়েছে। এটি দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে সহায়তা করছে।

একীভূত যোগ্যতা মূল্যায়ন

এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে শিক্ষকদের জন্য একটি জাতীয় স্তরের যোগ্যতা মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা সারা দেশে শিক্ষকদের যোগ্যতার একটি সমান মানদণ্ড নিশ্চিত করে।

এমপিওভুক্তির পূর্বশর্ত

এনটিআরসিএ সনদ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্তির জন্য একটি পূর্বশর্ত হিসেবে কাজ করে। এতে শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত হয় এবং শিক্ষকতা পেশার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

এনটিআরসিএ’র নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুধু শিক্ষকদের যোগ্যতা যাচাইয়ের একটি মাধ্যম নয়, বরং এটি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষকদের পেশাগত মান উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এনটিআরসিএ সনদধারী শিক্ষকদের চাকরির নিশ্চয়তা এবং এমপিওভুক্তির সুযোগ থাকায় শিক্ষকতা পেশা আরও আকর্ষণীয় হয়েছে।

জানা দরকার:

এনটিআরসিএ সনদ শুধুমাত্র বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য প্রযোজ্য। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ

এনটিআরসিএ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও এর কার্যক্রমে বিভিন্ন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি প্রধান সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ আলোচনা করা হলো:

প্রধান সমস্যা ও চ্যালেঞ্জসমূহ

১. পরীক্ষা আয়োজনে দীর্ঘসূত্রিতা

এনটিআরসিএ প্রতিবছর নিয়মিত পরীক্ষা আয়োজন করতে পারে না। ফলে প্রার্থীদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয় এবং তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকেন। এটি প্রার্থীদের ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় বাধার সৃষ্টি করে।

২. ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব

অনেক সময় পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা যায়। এতে প্রার্থীদের মনে হতাশা ও অসন্তোষ তৈরি হয়। এছাড়া, ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হলে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াও বিলম্বিত হয়।

৩. নিয়োগ সংকট

এনটিআরসিএ সনদধারী অনেক শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত নিয়োগ না হওয়ায় বেকারত্ব সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এছাড়া, এমপিওভুক্তির বিলম্ব ও জটিলতাও শিক্ষকদের সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

৪. অনলাইন সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা

এনটিআরসিএ’র অনলাইন আবেদন সিস্টেমে প্রায়ই সমস্যা দেখা দেয়। সার্ভার ধীরগতি, ওয়েবসাইট ক্র্যাশ, প্রবেশপত্র ডাউনলোডে সমস্যা ইত্যাদি কারণে প্রার্থীরা অসুবিধার সম্মুখীন হন।

সমাধানের প্রস্তাবনা

  • নিয়মিত পরীক্ষা আয়োজন: প্রতিবছর নিয়মিতভাবে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা আয়োজন করা প্রয়োজন।
  • দ্রুত ফলাফল প্রকাশ: পরীক্ষার পর যথাসম্ভব দ্রুত সময়ে ফলাফল প্রকাশ করা উচিত।
  • আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার: অনলাইন আবেদন ও ফলাফল ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা প্রয়োজন।
  • সমন্বিত নিয়োগ ব্যবস্থা: এনটিআরসিএ সনদধারী শিক্ষকদের জন্য একটি সমন্বিত নিয়োগ ব্যবস্থা চালু করা উচিত।

এসব সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে এনটিআরসিএ’র কার্যক্রম আরও গতিশীল ও প্রার্থী-বান্ধব করা সম্ভব। এতে করে বেসরকারি শিক্ষা খাতে উন্নত মানের শিক্ষক নিয়োগ সহজতর হবে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে সহায়তা করবে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

১. এনটিআরসিএ সনদ কি আজীবন বৈধ?

হ্যাঁ, এনটিআরসিএ সনদ আজীবন বৈধ। একবার সনদ প্রাপ্ত হলে তা নবায়ন করার প্রয়োজন নেই। তবে, নিবন্ধন নম্বর সংরক্ষণ করা জরুরি, কারণ এটি পরবর্তীতে নিয়োগের সময় প্রয়োজন হবে।

২. এনটিআরসিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে কি নিয়োগ নিশ্চিত?

না, এনটিআরসিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া নিয়োগ নিশ্চিত করে না। এটি শুধুমাত্র বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য একটি পূর্বশর্ত। নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে হবে।

৩. প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে কতদিন পর্যন্ত মূল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে?

প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে, প্রার্থী পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে যে কোন মূল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। দুই বছরের মধ্যে মূল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে, আবার প্রাথমিক পরীক্ষা দিতে হবে।

৪. এনটিআরসিএ সনদ হারিয়ে গেলে কী করতে হবে?

এনটিআরসিএ সনদ হারিয়ে গেলে, ডুপ্লিকেট সনদের জন্য আবেদন করতে হবে। এর জন্য এনটিআরসিএ’র অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে নির্দিষ্ট ফরম সংগ্রহ করে পূরণ করতে হবে। ফরমের সাথে নির্ধারিত ফি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

৫. কি কি ধরনের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এনটিআরসিএ সনদ বাধ্যতামূলক?

এনটিআরসিএ সনদ বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি হল: বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বেসরকারি কলেজ, বেসরকারি মাদ্রাসা (দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল)। এছাড়া, MPO (মাসিক বেতন অর্ডার) প্রাপ্তির জন্যও এনটিআরসিএ সনদ বাধ্যতামূলক।

উপসংহার

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষা খাতে শিক্ষকদের যোগ্যতা যাচাই ও নিবন্ধন প্রদানের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর প্রতিষ্ঠার পর থেকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া অধিক স্বচ্ছ, মেধাভিত্তিক ও সুশৃঙ্খল হয়েছে।

এনটিআরসিএ সনদ শিক্ষকদের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় দলিল, যা তাদের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ এবং এমপিওভুক্তির সুযোগ প্রদান করে। এটি শিক্ষকতা পেশার মর্যাদা বৃদ্ধি ও শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

তবে, এনটিআরসিএ’র কার্যক্রমে কিছু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন পরীক্ষা আয়োজনে দীর্ঘসূত্রিতা, ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব, নিয়োগ সংকট ইত্যাদি। এসব সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে এনটিআরসিএ’র কার্যক্রম আরও গতিশীল ও প্রার্থী-বান্ধব করা প্রয়োজন।

পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এনটিআরসিএ’র ভূমিকা অপরিসীম। উন্নত ও কার্যকর এনটিআরসিএ ব্যবস্থা শুধু শিক্ষকদের মান নিশ্চিত করবে না, বরং সমগ্র জাতির শিক্ষার মান উন্নয়নে অবদান রাখবে।

যোগাযোগ:

ওয়েবসাইট: www.ntrca.gov.bd

ঠিকানা: বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ), ৩৭/৩/এ, ইস্কাটন গার্ডেন রোড, রমনা, ঢাকা-১০০০।

ফোন: +৮৮-০২-৯৩৫৬০৫০, +৮৮-০২-৯৩৪৬৬৬৩

© ২০২৩ – সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই নিবন্ধটি সর্বশেষ আপডেট করা হয়েছে: মে ২০২৩

সতর্কতা: নিবন্ধে উল্লেখিত তথ্য ও নিয়মাবলী পরিবর্তন হতে পারে। সর্বদা এনটিআরসিএ’র অফিশিয়াল ওয়েবসাইট দেখুন।

 

Latest articles

Related articles