পরিচিতি
“রাজকুমার মুভি” এক উত্তেজনাপূর্ণ গল্প যা দৃষ্টিনন্দন ভিজ্যুয়াল, শক্তিশালী অভিনয় এবং আকর্ষণীয় প্লটের মিশ্রণে তৈরি। এটি মুক্তির পর থেকেই দর্শকদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এই রিভিউটি আপনাকে মুভিটির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে একটি বিস্তারিত ধারণা দেবে।
মুভির গল্প
“রাজকুমার” একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত অ্যাকশন-ড্রামা। মুভিটি একটি রাজ্যের ভবিষ্যৎ রাজার সংগ্রামকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। গল্পটি শুরু হয় রাজকুমারের শৈশব থেকে, যেখানে তাকে তার দায়িত্ব এবং নৈতিকতার মানে শেখানো হয়। রাজ্যের শত্রুদের বিরুদ্ধে তার লড়াই, প্রেমের সম্পর্ক, এবং রাজনীতির কূটকৌশল মুভির মূল আকর্ষণ।
ভালো দিক রাজকুমার মুভি
এই মুভির সবচেয়ে পজেটিভ সাইড হচ্ছে সুপারস্টার শাকিব খানের সুন্দর অভিনয় পুরো মুভিটাই শাকিব খান একাই টেনে নিয়ে গিয়েছে। আমাদের বাংলাদেশের পরিচালকদের নিয়ে দর্শকদের একটা অভিযোগ রয়েছে যে, তারা শাকিব খানকে সঠিক জায়গায় ব্যবহার করতে পারেনা যেখানে কলকাতার পরিচালকরা পূর্বে শাকিব খানকে জায়গামত ব্যবহার করেছে কিন্তু সেখানে বাংলাদেশের পরিচালকরা ব্যর্থ এইসব কথা প্রায়ই শোনা যেত। তবে হিমেল আশরাফ ছিল সেখানে পুরোপুরি সফল। যে শাকিবের অভিনয়টা পুরোপুরিভাবে বের করে আনতে পেরেছে। প্রিয়তমার পর রাজকুমারেও এক অসাধারন শাকিব খানকেই দেখা গিয়েছে। আমি একজন নিউট্রাল ফ্যান হিসেবে সবসময় এরকম শাকিব খানকেই দেখতে চাই। শাকিব খান ছাড়াও তারিক আনাম খান, দিলারা জামান এর অভিনয় যথেষ্ট ভালো ছিল। কোর্টনি কফি কে নিয়ে আমার অনেকটা ভয় ছিল কিন্তু সেই অনুযায়ী সে তার জায়গা থেকে ভালো করেছে। তার মুখে বাংলা সংলাপগুলো শুনতে বেশ ভালোই লেগেছে। মাহিয়া মাহি এবং আরশ খান দুজন নিজেদের সেরাটাই দিয়েছে। বাংলা মুভি হিসেবে মেকিং ছিল দেখার মত এবং গল্পটাও বেশ ভালো ছিল। যদিও হাফটাইমের পর কিছু জায়গায় শর্ট রাখতে পারলে আরও বেটার হত। স্ক্রিনপ্লে, সিনেমাটোগ্রাফি, কালার গ্রেডিং এবং বিজিএম খুবই ভালো ছিলহ বেশ ভালো ছিল। মুভির লোকেশনগুলো ছিল খুবই সুন্দর। আমেরিকার মত সুন্দর সুন্দর লোকেশনগুলোতে শুট করা হয়েছে। মুভিতে মা এর প্রতি ছেলের অন্ধ ভালোবাসা, দেশপ্রেম দেখানো হয়েছে। আহমেদ শরীফ মারা যাওয়ার পরের সিনটা ছিল শাকিব খান এবং ডাক্তার এজাজ এর কমেডিগুলো সিনগুলো সিনেমা হলে সবাইকে হাসিয়েছে। বাংলা মুভিতে পূর্বে দেখেছি দর্শকদের জোর করে হাসানোর চেষ্টা করা হয়, সেখানে রাজকুমার মুভিতে সেটা করতে হয়নি। ফার্স্ট হাফ এর কমেডিগুলো জোস ছিল। ফার্স্ট হাফ এবং সেকেন্ড দুইটাই ভালো ছিল। আমার কাছে এন্ডিংটাও চমৎকার লেগেছে। শাকিব খান এবং কোর্টনি কফি দুজনকে বেশ ভালো লেগেছে।
নেগেটিভ দিক রাজকুমার মুভি
এখন নেগেটিভ সাইড বলতে গেলে, আমি একাই রাজকুমার গানটা রাখার কোন দরকারই ছিল না। একদমই অপ্রয়োজনীয় একটা গান। এই গানটা রিলিজ হওয়ার পরে সবখান থেকেই প্রচুর সমালোচনা হয়। আর আরশ খান এর দাড়িগুলো একটু দৃষ্টিকটু লেগেছে, রিয়েলিস্টিক লাগেনি যেমনটি প্রিয়তমা তে শাকিবের দাড়িগুলোগুলো রিয়েলিস্টিক লেগেছিল। আর ফার্স্ট হাফ এর পরের ইমোশনাল সিনগুলোতে একটু শর্ট করলেই বেটার হত বলে আমি মনে করি। যদিও ইমোশনাল সিনগুলো খুবই ভালো লেগেছে, বেশ ভালো ছিল, তবুও সেখানটায় একটু শর্ট করলে সকল দর্শকদের জন্যই বেটার হত। আর আরেকটি জিনিস যেটা খুবই খারাপ লেগেছে সেটা হচ্ছে এই মুভির অ্যাকশন। যদিও এরকম টাইপের মুভিতে অ্যাকশন না থাকলেও চলত তবুও অ্যাকশন যা দেখলাম সেটা আমার কাছে মোটেও ভালো লাগেনি। বরং আমি বলব এর থেকে প্রিয়তমার অ্যাকশনই অনেক ভালো ছিল। হিমেল আশরাফ এখানটায় ভালোই চাপাবাজি করেছে মুভির অ্যাকশন দেখে হতাশ।
“রাজকুমার মুভি” প্রিয়তমার থেকে সবদিক দিয়েই এগিয়ে থাকবে এবং এটাই হিমেল আশরাফ এর ক্যারিয়ারে সেরা কাজগুলোর মধ্যে নিঃসন্দেহে এক নম্বরে থাকবে। এক প্রিয়তমাতে শেষ আধা ঘন্টা ছিল সেই সিনগুলো সবাইকে কাঁদিয়েছিল কিন্তু “রাজকুমার মুভি” এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি সিনগুলোই ছিল দেখার মত, বেশ উপভোগ্য। অবশ্য এই মুভিটি সবার ভালো লাগবে না। যারা একদম রোমান্স বা অ্যাকশন জনরার মুভি দেখতে অভ্যস্ত যারা এরকম মনে করেই হলে গিয়েছিল তাদের কাছে এই মুভিটি ভালো লাগবে না। আপনাদের ধুমধারাক্কা অ্যাকশন মুভি দেখতে হলে শাকিব খানের তুফান মুভির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। যেটার পরিচালনায় রয়েছে রায়হান রাফি। তবে যদি এক অন্যরকম শাকিব খানকে দেখতে চান, বাংলা মুভি হিসেবে ভালো কিছু দেখতে চান, তাহলে এই মুভিটা দেখতে পারেন আশাকরি খুবই ভালো লাগবে। “রাজকুমার” দেখে নিঃসন্দেহেই বলা যায়, শাকিবের ক্যারিয়ারের সেরা মুভিগুলোর মধ্যে একটি। এটা শাকিবের মুভিগুলোর সেরা অভিনয়ের মধ্যে একটি। যেটাতে তিনি নিজেকে আবারও প্রমাণ দিয়েছেন। “রাজকুমার মুভি” ফ্যামিলি নিয়ে দেখার মত একটি মুভি। তো এই ছিল আমার রিভিউ আমার কাছে মুভিটি এককথায় খুবই দারুণ লেগেছে।
অভিনয়
- প্রধান চরিত্রে: অভিনেতা শাকিব খান রাজকুমারের ভূমিকায় অনবদ্য। তার চরিত্রটি শক্তিশালী, আবেগময় এবং প্রভাবশালী।
- নায়িকা: কোর্টনি কফি প্রেমিকা ও সঙ্গীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, যিনি গল্পে ভারসাম্য এবং আবেগ যোগ করেছেন।
- ভিলেন: মুভির বিরোধী চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। তার উপস্থিতি গল্পের টানটান উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
পরিচালনা
পরিচালক হিমেল আশরাফ অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে মুভিটিকে জীবন্ত করে তুলেছেন। ক্যামেরার কাজ এবং চিত্রনাট্য মুভির প্রত্যেকটি দৃশ্যকে বাস্তবধর্মী এবং মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে।
মিউজিক
“রাজকুমার” মুভির সাউন্ডট্র্যাকও দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। আরশাদান আদনান এর তৈরি গানগুলো গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং আবেগপ্রবণ। বিশেষ করে রাজকুমার গানটি দর্শকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
চিত্রগ্রহণ
চিত্রগ্রাহক খুব সুন্দর কাজ করেছেন। মুভির প্রতিটি দৃশ্যই দৃষ্টিনন্দন। যুদ্ধের দৃশ্যগুলো বাস্তবসম্মত এবং কোরিওগ্রাফি অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
মুভির ইতিবাচক দিক
- শক্তিশালী স্ক্রিপ্ট।
- চরিত্রগুলোর গভীরতা।
- ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস এবং সেট ডিজাইন।
- মিউজিক এবং ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর।
মুভির নেতিবাচক দিক
- কিছু দৃশ্য অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘ।
- গল্পের কিছু অংশ পূর্বানুমেয়।
- সেকেন্ড হাফ তুলনামূলক ধীর গতির।
দর্শকদের প্রতিক্রিয়া
“রাজকুমার” মুভিটি দর্শকদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। কেউ গল্প এবং অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন, আবার কেউ গল্পের ধীরগতির জন্য কিছুটা হতাশ হয়েছেন।
চূড়ান্ত রায়
“রাজকুমার” এমন একটি মুভি যা ঐতিহাসিক গল্পপ্রেমীদের মন জয় করবে। শক্তিশালী অভিনয়, অসাধারণ ভিজ্যুয়াল এবং হৃদয়গ্রাহী মিউজিক মুভিটিকে বিশেষ করে তুলেছে। যদিও কিছু ছোটখাটো দুর্বলতা রয়েছে, তবে এটি উপেক্ষা করার মতো।
রেটিং: ৮/১০
শেষ কথা
যদি আপনি একটি উত্তেজনাপূর্ণ এবং দৃষ্টিনন্দন গল্প দেখতে চান, তাহলে “রাজকুমার” আপনার জন্য সেরা চয়েস। এটি একটি সিনেম্যাটিক অভিজ্ঞতা যা আপনাকে মুগ্ধ করবে।
রাজকুমার মুভি দেখুন এবং নিজের মতামত শেয়ার করুন!