বাংলা সিনেমা জগতে ২০২২ সালের অন্যতম আলোচিত সিনেমা ছিল ‘হাওয়া’। মেজবাউর রহমান সুমনের পরিচালিত এই সিনেমাটি মুক্তির পর থেকেই দর্শক এবং সমালোচকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। রহস্য-নাট্যধর্মী ঘরানার এই সিনেমাটি শুধু কাহিনির জোরেই নয়, বরং অভিনয়শিল্পীদের দক্ষতা, সঙ্গীত এবং দৃশ্যায়নের সৌন্দর্যেও প্রশংসিত হয়েছে।
চলচ্চিত্রের পটভূমি এবং কাহিনী
‘হাওয়া’ সিনেমার মূল গল্প আবর্তিত হয়েছে একটি মাছ ধরার ট্রলারে আটকে পড়া মাঝি-মাল্লাদের জীবন এবং তাদের মুখোমুখি হওয়া রহস্যময় ঘটনার মধ্য দিয়ে।
গল্পের কেন্দ্রে রয়েছে আটজন মাঝি এবং এক রহস্যময় বেদেনী, যিনি তাদের যাত্রায় যোগ দেন। ট্রলারে শুরু হয় ধীরে ধীরে অদ্ভুত সব ঘটনা। বেদেনী চরিত্রটি যেমন রহস্যে ঘেরা, তেমনি তার উপস্থিতি মাঝি-মাল্লাদের জীবনে নানা জটিলতা এবং উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
গভীর সমুদ্রে তাদের এই অভিযানে বন্ধুত্ব, সন্দেহ, ক্রোধ, এবং অজানা এক শত্রুর সঙ্গে লড়াইয়ের একটি চমৎকার মিশ্রণ দর্শকদের মনোমুগ্ধ করেছে। সিনেমার শেষ পর্যায়ে কাহিনী এমন এক মোড় নেয়, যা দর্শকদেরকে ভাবনার জগতে ডুবিয়ে দেয়।
অভিনয়শিল্পীরা এবং তাদের চরিত্র
‘হাওয়া’ সিনেমার অভিনয়শিল্পীরা তাঁদের অসাধারণ দক্ষতা দিয়ে সিনেমাটিকে প্রাণবন্ত করেছেন। প্রতিটি চরিত্রই গল্পের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
- চঞ্চল চৌধুরী:
সিনেমার অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। তার চরিত্রে রহস্য এবং বাস্তবতার এমন এক মিশ্রণ দেখা যায়, যা দর্শকদের প্রতিটি মুহূর্তে আকৃষ্ট করে। - নাজিফা তুষি:
রহস্যময় বেদেনীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নাজিফা তুষি। তার চরিত্রটি গল্পের গতিপথ পাল্টানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। - শরীফুল রাজ, নাসির উদ্দিন খান, এবং সোহেল মণ্ডল:
এই অভিনেতারা মাঝি-মাল্লাদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তাদের চরিত্রের প্রতিটি আবেগ এবং আচরণ গভীরভাবে কাহিনিকে প্রভাবিত করে।
পরিচালনা এবং প্রযোজনা
‘হাওয়া’ সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন মেজবাউর রহমান সুমন, যিনি এই সিনেমার মাধ্যমে তার পরিচালনার প্রতিভার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সিনেমার চিত্রনাট্য, দৃশ্যায়ন এবং সংলাপগুলো প্রতিটি দৃশ্যকে বাস্তবসম্মত এবং আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
প্রযোজনার দায়িত্বে ছিল সান মিউজিক অ্যান্ড মোশন পিকচার্স লিমিটেড, যা বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জন্য নতুন একটি মানদণ্ড স্থাপন করেছে।
সঙ্গীত এবং সিনেমাটোগ্রাফি
‘হাওয়া’ সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী। সিনেমার গানগুলোর মধ্যে ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই গানটি শুধু বাংলাদেশের নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সমাদৃত হয়েছে।
সিনেমাটোগ্রাফি:
গভীর সমুদ্র, ট্রলারের জীবন এবং রহস্যময় পরিবেশকে এমনভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা দর্শকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
মুক্তি এবং প্রাপ্তি
‘হাওয়া’ ২০২২ সালের ২৯ জুলাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। মুক্তির পর থেকেই সিনেমাটি দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং বক্স অফিসে বিশাল সাফল্য লাভ করে।
- সমালোচকদের প্রশংসা:
চলচ্চিত্র সমালোচকরা এর চিত্রনাট্য, পরিচালনা, এবং অভিনয়ের উচ্চ প্রশংসা করেছেন। - বাণিজ্যিক সাফল্য:
সিনেমাটি মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই বক্স অফিসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আয় করে এবং বছরের সেরা আয় করা সিনেমাগুলোর মধ্যে স্থান পায়। - আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি:
‘হাওয়া’ শুধু বাংলাদেশেই নয়, কলকাতা এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতেও প্রদর্শিত হয়েছে।

দর্শকদের প্রতিক্রিয়া
‘হাওয়া’ সিনেমাটি মুক্তির পর থেকে দর্শকদের বিপুল ভালোবাসা পেয়েছে।
- গল্পের গভীরতা:
অনেক দর্শক মনে করেছেন, গল্পটি শুধু বিনোদন নয়, বরং মানুষের অন্তর্নিহিত রহস্য এবং সম্পর্কের জটিলতা তুলে ধরেছে। - দৃশ্যায়নের প্রশংসা:
গভীর সমুদ্রের পরিবেশ এবং রহস্যময় পরিস্থিতি দর্শকদের বাস্তবের মতো মনে হয়েছে। - গানের জনপ্রিয়তা:
‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এটি বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
দেখার উপায়
‘হাওয়া’ সিনেমাটি বর্তমানে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সহজলভ্য। দর্শকরা নিচের প্ল্যাটফর্মগুলোতে এটি উপভোগ করতে পারেন:
- বঙ্গো
- বিলিবিলি (Bilibili)
- ইউটিউব প্রিমিয়াম
‘হাওয়া’ সিনেমাটি শুধুমাত্র একটি সিনেমা নয়, বরং এটি বাংলা চলচ্চিত্র জগতের একটি নতুন সংযোজন, যা দর্শকদের ভাবনার জগতে নিয়ে যায়। গল্প, অভিনয় এবং সঙ্গীতের সংমিশ্রণে এটি একটি অনন্য অভিজ্ঞতা। যারা রহস্য এবং নাটক ভালোবাসেন, তাদের জন্য ‘হাওয়া’ অবশ্যই দেখার মতো একটি সিনেমা।
আপনি যদি আরো কিছু জানতে চান তাহলে অবশ্যই চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইট https://moviereviewinbangla.com/