back to top

হানি সিংগারের গান: ইয়ো ইয়ো হানি সিং এর সংগীত জগতে অবদান

- Advertisement -

হানি সিংগারের গান: ইয়ো ইয়ো হানি সিং এর সংগীত জগতে অবদান

ভূমিকা

ইয়ো ইয়ো হানি সিং, যার আসল নাম হরদীপ সিং, ভারতীয় সংগীত জগতে একটি পরিচিত নাম। তিনি একজন র‍্যাপার, গায়ক, সংগীত পরিচালক এবং গীতিকার হিসেবে পরিচিত। হানি সিং ভারতীয় পপ সংগীতে হিপ-হপ এবং র‍্যাপ জনপ্রিয় করার জন্য সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব পান। তাঁর অসাধারণ শৈলী, উদ্ভাবনী বিট এবং ক্যাচি লিরিক্স তাকে ভারতীয় সংগীত শিল্পে একটি আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই নিবন্ধে, আমরা হানি সিং এর সংগীত জীবন, তাঁর সেরা গানসমূহ, বলিউডে অবদান এবং তাঁর সম্প্রতি কাজগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। ‘ইয়ো ইয়ো হানি সিং’ ব্র্যান্ড কীভাবে ভারতীয় সংগীতের পরিদৃশ্যকে পরিবর্তন করেছে এবং যুব সমাজের উপর তাঁর প্রভাব সম্পর্কে আমরা জানব।

ইয়ো ইয়ো হানি সিং এর প্রাথমিক জীবন

হানি সিংগারের গান হরদীপ সিং সারহন (জন্ম: ১৫ মার্চ, ১৯৮৩) পাঞ্জাবের হোশিয়ারপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা বলদেব সিং ছিলেন একজন পাঞ্জাবি সংগীতশিল্পী। ছোটবেলা থেকেই হানি সিং সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং গুরুশিক্ষা নেন। তিনি দিল্লিতে বেড়ে ওঠেন এবং সেখানে স্কুল জীবন শেষ করেন। প্রাথমিকভাবে তিনি ‘ইয়ো ইয়ো হানি সিং’ ছদ্মনাম ব্যবহার করতে শুরু করেন এবং পাঞ্জাবি সংগীতে তাঁর যাত্রা শুরু করেন। ২০০৫ সালে তিনি সংগীত পরিচালক এবং র‍্যাপার হিসেবে তাঁর পেশাদার যাত্রা শুরু করেন। শুরুর দিকে, হানি সিং এবং তাঁর সঙ্গী বাধশাহ মিলে “মাফিয়া মুন্ডীয়ের” নামে একটি দল গঠন করেন, যা পরবর্তীতে জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

সংগীত জীবনের শুরু

হানি সিং এর কেরিয়ার শুরু হয় পাঞ্জাবি সংগীতে। তিনি প্রথমে ‘গ্লাস’ নামে একটি অ্যালবাম রিলিজ করেন, যা মূলত সাধারণ শ্রোতাদের কাছে পৌঁছায়নি। তবে, তাঁর প্রথম হিট গান ‘লক এক’ ২০০৬ সালে রিলিজ হয়, যা ভারতীয় সংগীত পরিসরে তাঁর উপস্থিতি নিশ্চিত করে। ২০১১ সালে, তাঁর অ্যালবাম ‘ইন্টারন্যাশনাল ভিলেজার’ বড় হিট হয়, যার মধ্যে ‘অ্যাংগ্রি বিরদ’, ‘ডেসী কালি’, ‘গেট আপ জাওয়ানি’ ইত্যাদি গান রয়েছে। পাঞ্জাবি সংগীতে হানি সিং এর প্রথম বড় সাফল্য এসেছিল ‘ব্রাউন র‍্যাং’ গান দিয়ে, যেটি পরবর্তীতে ‘চিকনি চমেলি’ নামে বলিউডে রিমেক করা হয়েছিল। “হাই হিলস” এবং “ব্লু আইজ” তাঁর অন্যান্য জনপ্রিয় পাঞ্জাবি হিট গান।

বলিউডে প্রবেশ

বলিউডে হানি সিং এর প্রথম সুযোগ আসে ‘চিকনি চমেলি’ গানটি দিয়ে, যেটি ছিল পাঞ্জাবি গান ‘ব্রাউন র‍্যাং’ এর হিন্দি রিমেক। এই গানটি ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘দেসি বয়জ’ এর জন্য তিনি কম্পোজ করেন। ফিল্মফেয়ার পুরস্কারেও এই গানটি জায়গা করে নেয়। এরপর ‘কখলনায়ক’ সিনেমায় “সুবাহ হোনে না দে” এবং “লানেট অফ দ্য এইপস” এর টাইটেল ট্র্যাক ‘বানর’ (২০১২) বলিউডে হানি সিং এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়ায়। সেই সময়ে রিলিজ হওয়া ‘কটটো গিলাস’ এবং ‘ঠাপকি দি বং’ গানগুলোও হিট হয়েছিল। বলিউডে হানি সিং এর সবচেয়ে বড় হিট এসেছিল ‘চার বোতল ভোদকা’ গান দিয়ে, যা ‘গোলিয়ন কি রাসলীলা রাম-লীলা’ ফিল্মের জন্য কম্পোজ করা হয়েছিল। এরপর ‘লুটেরা’, ‘ফুগলি’, ‘সত্যমেব জয়তে’ সহ বিভিন্ন ফিল্মের জন্য তিনি গান কম্পোজ করেন এবং কণ্ঠ দেন। ইয়ো ইয়ো হানি সিং এর কেরিয়ারে অনেক হিট গান রয়েছে। এখানে তাঁর কিছু সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আইকনিক গানের তালিকা দেওয়া হল:
  • চার বোতল ভোদকা (গোলিয়ন কি রাসলীলা রাম-লীলা)
  • লানেট অফ দ্য এইপস (বানর)
  • ব্লু আইজ
  • আঙ্গরি বিরদ
  • লাভ ডোজ
  • ডেসী কালি
  • ওনে বটল ডাউন
  • সুবাহ হোনে না দে (কখলনায়ক)
  • লুনগি ডান্স (চেন্নাই এক্সপ্রেস)
  • পার্টি অল নাইট
  • চিকনি চমেলি (দেসি বয়জ)
  • মনালি ট্রান্স
  • কৈসা লাগতা হ্যায়
  • আদি আদি রাত
এছাড়াও, হানি সিং বেশ কিছু দুর্দান্ত পাঞ্জাবি এবং ইন্দি-পপ গান তৈরি করেছেন যেগুলো ইউটিউবে কোটি কোটি ভিউ পেয়েছে। তাঁর গানগুলো যুব সমাজের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

কমব্যাক এবং নতুন গানসমূহ

২০১৪ সালের দিকে, হানি সিং কিছু ব্যক্তিগত এবং স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে সংগীত জগত থেকে সাময়িকভাবে দূরে সরে যান। অনেকে ভেবেছিলেন তাঁর কেরিয়ার শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু ২০১৬ সালে তিনি ‘মখনা’ গান দিয়ে শক্তিশালী কমব্যাক করেন, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। কমব্যাকের পর তিনি ‘দেসি কালি ২.০’, ‘পারি পড়া’, ‘মিলে তু গ্রেট’ সহ বেশ কিছু হিট গান রিলিজ করেন। ২০১৮ সালে তিনি ‘সোনা সোনা’ এবং ‘মরজালে’ গান রিলিজ করেন, যা শ্রোতাদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলে। ‘লোকা’-এর মতো গানগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কোটি কোটি স্ট্রিম পেয়েছে।

হানি সিং এর সম্প্রতি প্রকাশিত গানসমূহ

সম্প্রতি, হানি সিং ‘প্যারাডক্স’ নামে একটি নতুন অ্যালবাম রিলিজ করেছেন, যার মধ্যে ‘জাট গেদি’, ‘২২২’, ‘মহারাণি’, ‘প্রভু জি’ সহ বেশ কিছু গান রয়েছে। ‘প্যারাডক্স’ অ্যালবামের গানগুলোতে অভিনয় করেছেন নিকিতা দুট্টা, উরফি জাভেদ, নোরা ফতেহি এবং মোনিকা সিংহ রইসের মতো অভিনেত্রীরা। ফরহান আখতার ও করণ জোহরের মতো প্রযোজকদের সাথে কাজ করে হানি সিং নতুনভাবে বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের অবস্থান মজবুত করেছেন। তাঁর সম্প্রতি রিলিজ হওয়া গানগুলো এবং কনসার্টগুলো ভারতজুড়ে অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছে।

সংগীত শৈলী এবং প্রভাব

হানি সিং ভারতীয় সংগীতে র‍্যাপ, হিপ-হপ এবং ইলেকট্রনিক মিউজিকের একটি অনন্য সংমিশ্রণ নিয়ে এসেছেন। তাঁর গানগুলোতে পাঞ্জাবি ভাষার সাথে ইংরেজি এবং হিন্দি মিশেল এবং ক্যাচি হুকলাইন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ভারতীয় যুব সমাজকে পশ্চিমা হিপ-হপ এবং র‍্যাপ সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, যা তাদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছে।
“আমি সবসময় চেষ্টা করেছি ভারতীয় এবং পশ্চিমা সংগীতের মধ্যে একটি সেতু তৈরি করতে। আমাদের সংস্কৃতি এবং ভাষার সৌন্দর্য বজায় রেখে গ্লোবাল সাউন্ড তৈরি করাই আমার লক্ষ্য।” – ইয়ো ইয়ো হানি সিং
হানি সিং এর প্রভাবের ফলে, ভারতে র‍্যাপ এবং হিপ-হপ সংগীত মূলধারার সংগীত হিসেবে গণ্য হতে শুরু করেছে। নতুন প্রজন্মের অনেক র‍্যাপার এবং সংগীতশিল্পী তাঁকে তাদের অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করেন। বাদশাহ, রাফতার, ইকা, গুরু রন্ধাওয়া এর মতো শিল্পীরা হানি সিং এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে সফল হয়েছেন।

বিতর্ক এবং চ্যালেঞ্জসমূহ

হানি সিং এর কেরিয়ার বিভিন্ন বিতর্ক এবং চ্যালেঞ্জে পূর্ণ ছিল। তাঁর কিছু গানের লিরিক্স নারীবিদ্বেষী এবং অশ্লীল হিসেবে সমালোচিত হয়েছে। সংগীতশিল্পী এবং নারী অধিকার কর্মীরা তাঁর কিছু গানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। ২০১৩ সালে, তিনি একটি বিশেষ বিমান যাত্রায় অশ্লীল গান পরিবেশন করার অভিযোগে আইনি সমস্যার সম্মুখীন হন। এছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে অন্যান্য আইনি অভিযোগও ছিল, যা তাঁর সংগীত কেরিয়ারে প্রভাব ফেলেছিল। ২০১৪ সালে, হানি সিং ঘোষণা করেন যে তিনি বাইপোলার ডিসঅর্ডার এবং নিদ্রাহীনতাসহ বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। এই সময়ে তিনি সংগীত জগত থেকে সাময়িক বিরতি নেন। কিন্তু তাঁর আত্মবিশ্বাস এবং দৃঢ়তার ফলে তিনি পরবর্তীতে সফলভাবে কমব্যাক করেন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১. ইয়ো ইয়ো হানি সিং এর সেরা গান কোনটি?
ইয়ো ইয়ো হানি সিং এর অনেক হিট গান রয়েছে, তবে ‘চার বোতল ভোদকা’, ‘ব্লু আইজ’, ‘অ্যাংগ্রি বিরদ’, ‘লুনগি ডান্স’, ‘ডেসি কালি’ এবং ‘মখনা’ তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় গানগুলির মধ্যে অন্যতম। টেস্ট অনুযায়ী প্রিয় গান নির্বাচন করা হলেও, স্ট্রিমিং নাম্বার এবং জনপ্রিয়তার বিচারে ‘চার বোতল ভোদকা’ অনেকের কাছে তাঁর সেরা গান হিসেবে বিবেচিত।
২. বলিউডে হানি সিং এর প্রথম গান কোনটি?
বলিউডে হানি সিং এর প্রথম গান ছিল ‘চিকনি চমেলি’, যা ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘দেসি বয়জ’ এর জন্য কম্পোজ করা হয়েছিল। এটি ছিল তাঁর পাঞ্জাবি হিট গান ‘ব্রাউন র‍্যাং’ এর হিন্দি রিমেক। এই গানটি অক্ষয় কুমার এবং জন অব্রাহাম অভিনীত সিনেমায় ব্যবহৃত হয়েছিল এবং খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।
৩. ইয়ো ইয়ো হানি সিং প্যারাডক্স নতুন গান?
হ্যাঁ, ‘প্যারাডক্স’ হল হানি সিং এর একটি নতুন অ্যালবাম, যা সম্প্রতি রিলিজ হয়েছে। এই অ্যালবামে বেশ কয়েকটি গান রয়েছে, যার মধ্যে ‘জাট গেদি’, ‘২২২’, ‘মহারাণি’, ‘প্রভু জি’ এবং ‘দে তালি’ অন্যতম। প্যারাডক্স অ্যালবামের গানগুলো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে এবং ইউটিউবে উপলব্ধ রয়েছে এবং শ্রোতাদের কাছে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছে।
৪. হানি সিং এর নতুন গানের অভিনেত্রী কে?
হানি সিং এর সম্প্রতি রিলিজ হওয়া গানগুলোতে বেশ কয়েকজন অভিনেত্রী অভিনয় করেছেন। ‘প্যারাডক্স’ অ্যালবামে নিকিতা দুট্টা, উরফি জাভেদ এবং মোনিকা সিংহ রইস অভিনয় করেছেন। এছাড়াও, তাঁর সাম্প্রতিক কিছু গানে নোরা ফতেহি, জ্যাকলিন ফার্নান্দেজ এবং নেহা শর্মাও অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে ‘দে তালি’ গানে উরফি জাভেদ এবং ‘২২২’ গানে নিকিতা দুট্টার অভিনয় দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

উপসংহার

ইয়ো ইয়ো হানি সিং নিঃসন্দেহে ভারতীয় সংগীত জগতে একটি পরিবর্তনকারী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। পাঞ্জাবি লোক সংগীত, হিপ-হপ এবং ইলেকট্রনিক সংগীতের অভিনব সংমিশ্রণের মাধ্যমে, তিনি ভারতীয় সংগীতকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে গেছেন। তাঁর গানগুলো কেবল ভারতেই নয়, বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। যদিও তাঁর কেরিয়ারে নানা ওঠানামা ও বিতর্ক ছিল, তবে তাঁর কঠোর পরিশ্রম, উদ্ভাবনী সৃজনশীলতা এবং অনন্য শৈলী তাঁকে আজ ভারতীয় সংগীতের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের একজন করে তুলেছে। তাঁর প্রতিভার ফলে, অনেক তরুণ শিল্পী অনুপ্রাণিত হয়েছে এবং ভারতীয় সংগীতে হিপ-হপ, র‍্যাপ এবং ইলেকট্রনিক মিউজিক একটি আলাদা মর্যাদা পেয়েছে।

Latest articles

Related articles