back to top

বাংলাদেশের নায়ক নায়িকাদের নামের তালিকা: অতীত থেকে বর্তমান

- Advertisement -

বাংলাদেশের নায়ক নায়িকাদের নামের তালিকা: অতীত থেকে বর্তমান

ঢাকাই চলচ্চিত্রের তারকাদের বিস্তারিত গাইড

আপডেট: মে ১৫, ২০২৩ পড়তে সময় লাগবে: ২৫ মিনিট

বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (BFDC)

বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (বিএফডিসি), ঢাকা – বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রাণকেন্দ্র

সূচিপত্র

ভূমিকা: বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়। স্বাধীনতা-পূর্ব যুগে পূর্ব পাকিস্তান থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশে এর ক্রমবিকাশ ঘটেছে। ১৯৫৬ সালে “মুখ ও মুখোশ” চলচ্চিত্রের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প এখন পর্যন্ত অনেক পথ পাড়ি দিয়েছে। এই দীর্ঘ পথচলায় অসংখ্য প্রতিভাবান নায়ক-নায়িকা তাদের অনন্য অভিনয় দক্ষতা দিয়ে দর্শকদের মনোরঞ্জন করেছেন।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধারার নায়ক-নায়িকারা জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। কেউ ছিলেন রোমান্টিক নায়ক, কেউ অ্যাকশন হিরো, আবার কেউ বা সমাজ সচেতন চরিত্রের অভিনেতা। নায়িকারাও তাদের নিজস্ব শৈলীতে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করেছেন। কেউ সৌন্দর্য দিয়ে, কেউ অভিনয় দক্ষতা দিয়ে, আবার কেউ বা তাদের ব্যক্তিত্ব দিয়ে দর্শকদের আকৃষ্ট করেছেন।

“চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা জনগণের মনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের নায়ক-নায়িকারা শুধু মনোরঞ্জনের জন্য নয়, সমাজের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরার জন্যও অভিনয় করেছেন।”
— জাহিদ হোসেন, চলচ্চিত্র সমালোচক

এই আর্টিকেলে আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন যুগের সেরা নায়ক-নায়িকাদের একটি বিস্তৃত তালিকা উপস্থাপন করব। এটি শুধু একটি নামের তালিকাই নয়, বরং তাদের অবদান, উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র এবং পুরস্কার সম্পর্কে তথ্য সহ একটি সম্পূর্ণ গাইড। আশা করি, এই তালিকা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প সম্পর্কে আগ্রহী পাঠকদের জন্য উপকারী হবে।

স্বর্ণযুগের নায়ক-নায়িকা (১৯৫৬-১৯৭১)

বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগ বলা হয় ১৯৫৬ থেকে ১৯৭১ সালের সময়কালকে। এই সময়ে অনেক মানসম্পন্ন ছবি নির্মিত হয় এবং অসংখ্য প্রতিভাবান শিল্পী আবির্ভূত হন। এই যুগের নায়ক-নায়িকারা শুধু অভিনয় দক্ষতা নয়, তাদের চরিত্র ও আদর্শ দিয়েও দর্শকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন।

নায়করাজ রাজ্জাক, বাংলাদেশের নায়ক নায়িকাদের নামের তালিকা

নায়করাজ রাজ্জাক

কবরী, বাংলাদেশের নায়ক নায়িকাদের নামের তালিকা

কবরী

স্বর্ণযুগের নায়কগণ

১. নায়করাজ রাজ্জাক

জন্ম: ১৯৪২

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: জীবন থেকে নেয়া, রাঙ্গা প্রভাত, জীবন নদী, অনুরাগ

পুরস্কার: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একুশে পদক

২. জাহির রায়হান

জন্ম: ১৯৩৫

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: জীবন থেকে নেয়া, বেহুলা, জিঞ্জির

বিশেষত্ব: অভিনেতা ও পরিচালক হিসেবে দ্বৈত ভূমিকা

৩. আলমগীর

জন্ম: ১৯৪২

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: অনন্ত প্রেম, নয়নমণি, কৃপণ

পুরস্কার: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

৪. খান আতাউর রহমান

জন্ম: ১৯৩৮

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: সুতরাং, আবার তোরা মানুষ হ, লালসালু

বিশেষত্ব: মঞ্চ ও চলচ্চিত্রে অসাধারণ অভিনয়

৫. ফারুক

জন্ম: ১৯৪৮

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: গোলাপী এখন ট্রেনে, আবার তোরা মানুষ হ

বিশেষত্ব: শিক্ষিত ও পরিশীলিত অভিনয়শৈলী

৬. সুজন সাখী

জন্ম: ১৯৩৯

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: রূপবান, ধীরে বহে মেঘনা

বিশেষত্ব: বলিষ্ঠ চরিত্রে অভিনয়

স্বর্ণযুগের নায়িকাগণ

১. কবরী

জন্ম: ১৯৫০

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: সুতরাং, তিতাস একটি নদীর নাম, সরেঙ্গ বউ

পুরস্কার: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

২. শাবানা

জন্ম: ১৯৪২

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: সুতরাং, দেবদাস, আবার তোরা মানুষ হ

পুরস্কার: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একুশে পদক

৩. রৌশন জামিল

জন্ম: ১৯৪৬

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: জীবন থেকে নেয়া, অনুরাগ, ঘরে-বাইরে

বিশেষত্ব: অভিজাত ও পরিশীলিত অভিনয়

৪. সুচন্দা

জন্ম: ১৯৪৮

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: জিঞ্জির, আবার তোরা মানুষ হ

বিশেষত্ব: সাবলীল অভিনয় দক্ষতা

৫. নূতন

জন্ম: ১৯৫২

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: পিয়াসী, চাঁদের মতো বউ

বিশেষত্ব: অতুলনীয় সৌন্দর্য ও অভিনয় প্রতিভা

৬. অঞ্জনা রহমান

জন্ম: ১৯৫৩

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: অগ্নিস্নান, বিরহ বিষাদ, বাদী-বিবাদী

বিশেষত্ব: গভীর আবেগপূর্ণ অভিনয়

এই সময়কালে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে। শিল্পগত মান উন্নত হয় এবং বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় ও সংস্কৃতি চলচ্চিত্রে ফুটে ওঠে। নায়ক-নায়িকারা শুধু অভিনয় নয়, সমাজ সচেতনতা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখেন। এই সময়ের অনেক চলচ্চিত্র আজও ক্লাসিক হিসেবে পরিচিত।

স্বাধীনতা-পরবর্তী যুগের নায়ক-নায়িকা (১৯৭২-১৯৮০)

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণে নতুন উদ্দীপনা লক্ষ করা যায়। এই সময়ে নতুন প্রজন্মের নায়ক-নায়িকারা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে আবির্ভূত হন। মুক্তিযুদ্ধ-ভিত্তিক চলচ্চিত্র, সামাজিক সমস্যা ও জীবনযাপনের বিভিন্ন দিক নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছবি তৈরি হয়। এই সময়ের নায়ক-নায়িকারা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনাকে সিনেমার মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌঁছে দেন।

ফারুক

ফারুক

শাবানা

শাবানা

ববিতা

ববিতা

১৯৭০ দশকের প্রধান নায়কগণ

  1. বুলবুল আহমেদ

    উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: শিমানা পেরিয়ে, চিরদিন তুমি আমার

    বিশেষত্ব: নাট্য ও চলচ্চিত্রে অতুলনীয় অভিনয়

  2. ওয়াসিম

    উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: মম্মী, লাকী আকবর

    বিশেষত্ব: অ্যাকশন নায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা

  3. জাফর ইকবাল

    উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: অলঙ্কার, লাল সবুজের পতাকা

    বিশেষত্ব: মুক্তিযুদ্ধ-ভিত্তিক চলচ্চিত্রে অভিনয়

  4. সোহেল রানা

    উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: বেদের মেয়ে জোসনা, গোলাপী এখন ট্রেনে

    বিশেষত্ব: হৃদয়গ্রাহী অভিনয় শৈলী

  5. ইলিয়াস কাঞ্চন

    উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: দেবদাস, সুপুত্র

    বিশেষত্ব: বলিষ্ঠ চরিত্রে অভিনয়

১৯৭০ দশকের প্রধান নায়িকাগণ

  1. ববিতা

    উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: সুটি, তিতাস একটি নদীর নাম

    পুরস্কার: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

  2. কবরী

    উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: লালু-ভালু, আনন্দ অশ্রু

    বিশেষত্ব: মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জনপ্রিয় নায়িকা

  3. পারভীন সুলতানা

    উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: আমি সে আমার, আগুনের পরশমনি

    বিশেষত্ব: নাট্য এবং চলচ্চিত্রে সমান পারদর্শিতা

  4. ডলি জহির

    উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: নয়নমণি, দরিদ্র

    বিশেষত্ব: আবেগপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়

  5. দিতি

    উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: আলোর মিছিল, জীবন সংগ্রাম

    বিশেষত্ব: অসাধারণ নৃত্য ও অভিনয় দক্ষতা

“স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়। এই সময়ের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা চলচ্চিত্রকে নিছক মনোরঞ্জনের মাধ্যম হিসেবে না দেখে সমাজ-পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাদের অভিনীত চলচ্চিত্রগুলি আজও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।”
— আবদুল্লাহ আল মামুন, চলচ্চিত্র পরিচালক

৮০-৯০ এর দশকের নায়ক-নায়িকা

১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশক বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে ছিল পরিবর্তনের এক সময়। এই সময়ে চলচ্চিত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ে এবং নতুন অনেক ধারার চলচ্চিত্র নির্মিত হতে থাকে। এই সময়ের নায়ক-নায়িকারাও ছিলেন বৈচিত্র্যময় ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। অ্যাকশন, রোমান্টিক, সামাজিক – বিভিন্ন ধারার চলচ্চিত্রে তারা অসাধারণ অভিনয় করেছেন।

৮০-৯০ এর দশকে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের পাশাপাশি আর্ট ফিল্ম বা তথাকথিত “আর্ট হাউস” চলচ্চিত্রের বিকাশও লক্ষ করা যায়। এই দুই ধারার মধ্যে সেতুবন্ধন স্থাপন করে অনেক শিল্পী উভয় ধারার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, যা তাদের প্রতিভাকে আরও বিকশিত করেছে।

মান্না

মান্না – ৮০-৯০ দশকের জনপ্রিয় অ্যাকশন নায়ক

উল্লেখযোগ্য নায়ক-নায়িকা (১৯৮০-২০০০)

সালমান শাহ

অভিনয়কাল: ১৯৯৩-১৯৯৬

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: কইয়া দিও, দেনমোহর, স্বপ্নের থিকানা

বিশেষত্ব: সংক্ষিপ্ত কেরিয়ারে অসামান্য অবদান

শাবনূর

অভিনয়কাল: ১৯৯৩-২০১০

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: প্রেমী, দরদী, চাঁদনী

বিশেষত্ব: ১৯৯০ এর দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা

মান্না

অভিনয়কাল: ১৯৮৪-২০০৮

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: খোদার আশীর্বাদ, কাইয়া বাংলার ছেলে, অস্ত্র

বিশেষত্ব: অ্যাকশন নায়ক হিসেবে অতুলনীয় জনপ্রিয়তা

মৌসুমী

অভিনয়কাল: ১৯৮৩-বর্তমান

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: ছুটি, মেঘ বিজলী বাদল, চাঁদের অধিকার

বিশেষত্ব: দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকা নায়িকা

ডিপজল

অভিনয়কাল: ১৯৮৮-বর্তমান

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: অগ্নিস্নান, পুত্র, রাঙ্গা ভাবী

বিশেষত্ব: বলিষ্ঠ ও অ্যাকশন চরিত্রে অভিনয়

পরী মনি

অভিনয়কাল: ১৯৮৭-বর্তমান

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: কেয়ামত থেকে কেয়ামত, স্বামী কন্যা পুত্র

বিশেষত্ব: বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী

ওমর সানী

অভিনয়কাল: ১৯৮৫-২০১৮

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: তুমি আমার, চাঁদনী রাত

বিশেষত্ব: রোমান্টিক নায়ক হিসেবে খ্যাতি

নিপুণ

অভিনয়কাল: ১৯৮৯-বর্তমান

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: সিরাজ উদ্দৌলা, লাভ ইন সিঙ্গাপুর

বিশেষত্ব: অভিনয় ও নৃত্যে সমান পারদর্শিতা

রিয়াজ

অভিনয়কাল: ১৯৯৫-বর্তমান

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: প্রাণ চায় চোখ না চায়, ভালোবাসতে ভালোবাসি

বিশেষত্ব: টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে সমান জনপ্রিয়তা

শাকিল খান

অভিনয়কাল: ১৯৯৯-বর্তমান

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: কোটি টাকার কাবিন, গ্রিল

বিশেষত্ব: অভিনয় ও পরিচালনায় সফলতা

এই সময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নতুন ধরনের গল্প, চরিত্র ও অভিনয়শৈলী দেখা যায়। টেলিভিশনের প্রসারের সাথে সাথে অনেক নায়ক-নায়িকা টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র উভয় মাধ্যমে অভিনয় করতে শুরু করেন। তাদের এই দ্বৈত অভিনয় অভিজ্ঞতা চলচ্চিত্রের মানকে উন্নত করতে সাহায্য করে।

আধুনিক যুগের নায়ক-নায়িকা (২০০০-বর্তমান)

২০০০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার, নতুন ধরনের চিন্তাভাবনা, এবং আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়। এই সময়ে বাণিজ্যিক ছবির পাশাপাশি স্বাধীন ও স্বল্প বাজেটের চলচ্চিত্র নির্মাণেও উৎসাহ বাড়ে। নতুন প্রজন্মের নায়ক-নায়িকারা বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মনোরঞ্জন করছেন।

আরিফিন শুভ ও তিশা, বাংলাদেশের নায়ক নায়িকাদের নামের তালিকা

আরিফিন শুভ – আধুনিক যুগের জনপ্রিয় অভিনেতা

আধুনিক যুগের উল্লেখযোগ্য অভিনেতা

আরিফিন শুভ

অভিনয়কাল: ২০০৭-বর্তমান

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: ধুঁয়া, দর্পণ বিসর্জন, ময়নামতি

বিশেষত্ব: আধুনিক যুগের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা

ফেরদৌস আহমেদ

অভিনয়কাল: ২০০০-বর্তমান

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: গারমেন্টস কন্যা, মনপুরা

বিশেষত্ব: টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে সমান দক্ষতা

বাপ্পি চৌধুরী

অভিনয়কাল: ২০০৬-বর্তমান

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: নাকাব, শ্বপ্নজাল

বিশেষত্ব: রোমান্টিক নায়ক হিসেবে জনপ্রিয়

চঞ্চল চৌধুরী

অভিনয়কাল: ২০০২-বর্তমান

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: ময়নামতি, দেবী, আহ্বান

বিশেষত্ব: বহুমুখী অভিনয় প্রতিভা

শাকিব খান

অভিনয়কাল: ১৯৯৯-বর্তমান

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: কোটি টাকার কাবিন, স্বপ্ন, আগুন

বিশেষত্ব: বাণিজ্যিক সাফল্য

জায়েদ খান

অভিনয়কাল: ২০০৮-বর্তমান

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: পোড়ামন ২, আগুনের পরশমণি

বিশেষত্ব: দৃষ্টিনন্দন উপস্থিতি

আধুনিক যুগের উল্লেখযোগ্য অভিনেত্রী

জয়া আহসান

অভিনয়কাল: ১৯৯৭-বর্তমান

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: গেরিলা, দেবী, পারাপার

বিশেষত্ব: অর্থপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়

তিশা

অভিনয়কাল: ২০০৩-বর্তমান

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: ধুঁয়া, দর্পণ বিসর্জন, হালদা

বিশেষত্ব: আধুনিক যুগের সেরা অভিনেত্রী

অপু বিশ্বাস

অভিনয়কাল: ২০০৫-বর্তমান

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: আন্তযাত, ময়নামতি, ভালোবাসা অসময়

বিশেষত্ব: সৌন্দর্য ও অভিনয় দক্ষতার সমন্বয়

নুসরাত ফারিয়া

অভিনয়কাল: ২০১১-বর্তমান

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: অগ্নি ২, বাজি, ভুবন মাঝি

বিশেষত্ব: নাট্য ও চলচ্চিত্রে সমান পারদর্শিতা

সাদিয়া জাহান প্রভা

অভিনয়কাল: ২০১০-বর্তমান

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: পাতাল সম্পদ, পোড়ামন

বিশেষত্ব: স্মার্ট ও আধুনিক চরিত্রে অভিনয়

মিথিলা

অভিনয়কাল: ২০০৭-বর্তমান

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: আহ্বান, আয়না কবিলা, পারাপার

বিশেষত্ব: পরিশীলিত ও আবেগপূর্ণ অভিনয়

“আধুনিক বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে আমরা দেখছি অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কেবল দেখতে সুন্দর হওয়া নয়, অভিনয় দক্ষতাও এখন সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নতুন প্রজন্মের নায়ক-নায়িকারা প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শিখেছেন এবং আন্তর্জাতিক মানের অভিনয় দেখাতে সক্ষম।”
— মোশাররফ করিম, অভিনেতা ও পরিচালক

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীরা

বাংলাদেশে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় চলচ্চিত্র সম্মাননা হল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ১৯৭৫ সাল থেকে এই পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অনেক বিশিষ্ট অভিনেতা-অভিনেত্রী এই পুরস্কার লাভ করেছেন। নিম্নে সেরা অভিনেতা ও সেরা অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কিছু বিশিষ্ট শিল্পীর তালিকা দেওয়া হল:

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সেরা অভিনেতা

বছর অভিনেতা চলচ্চিত্র
১৯৭৫ রাজ্জাক রাঙ্গা প্রভাত
১৯৮০ আলমগীর সরেঙ্গ বউ
১৯৮৬ হুমায়ুন ফরীদি গৃহবধূ
১৯৯০ সোহেল রানা চান্দাবাজ
১৯৯৩ মান্না শ্বাশুড়ী
২০০৬ ফেরদৌস আহমেদ গারমেন্টস কন্যা
২০১২ চঞ্চল চৌধুরী মনের মানুষ
২০১৫ শাকিব খান চুয়াচাঙ্গা
২০১৮ আরিফিন শুভ ধুঁয়া
২০২০ ফজলুর রহমান বাবু ফাগুন হাওয়ায়

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সেরা অভিনেত্রী

বছর অভিনেত্রী চলচ্চিত্র
১৯৭৫ কবরী সুতরাং
১৯৮০ শাবানা সরেঙ্গ বউ
১৯৮৬ দিতি গৃহবধূ
১৯৯০ রোজিনা কেয়ামত থেকে কেয়ামত
১৯৯৫ শাবনূর চাঁদনী
২০০৬ শাবনূর দারুচিনি দ্বীপ
২০১২ জয়া আহসান গেরিলা
২০১৬ কুশুম শিকদার হালদা
২০১৮ তিশা হালদা
২০২১ সুনীরা জেরিন নোলক

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ছাড়াও বাংলাদেশে আরও অনেক পুরস্কার রয়েছে যেমন মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, ইত্যাদি। এসব পুরস্কার নায়ক-নায়িকাদের অভিনয় প্রতিভাকে স্বীকৃতি দেয় এবং তাদের আরও ভালো কাজ করতে উৎসাহিত করে।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রী

বাংলাদেশের কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাদের অভিনীত চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে এবং পুরস্কার লাভ করেছে। এমন কিছু উল্লেখযোগ্য অভিনেতা-অভিনেত্রীর নাম নিচে দেওয়া হল:

জয়া আহসান, বাংলাদেশের নায়ক নায়িকাদের নামের তালিকা

জয়া আহসান

আন্তর্জাতিক অবদান: বাংলাদেশী ও ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয়, কলকাতার “টলিউড”-এ বিশেষ জনপ্রিয়তা

উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র: অবিমন্যু, বিষ্ণু, আয়না কবিলা

আন্তর্জাতিক পুরস্কার: কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার

তারেক আনাম, বাংলাদেশের নায়ক নায়িকাদের নামের তালিকা

তারেক আনাম

আন্তর্জাতিক অবদান: হলিউড ও বাংলাদেশী যৌথ প্রযোজনায় অভিনয়

উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র: দ্য লাস্ট থিঙ্গস, শূন্য থেকে শুরু

আন্তর্জাতিক পুরস্কার: নিউ ইয়র্ক ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভাল পুরস্কার

তিশা, বাংলাদেশের নায়ক নায়িকাদের নামের তালিকা

নুসরাত ইমরোজ তিশা

আন্তর্জাতিক অবদান: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত চলচ্চিত্রে অভিনয়

উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র: টেলিভিশন, হালদা, আবার বসন্ত

আন্তর্জাতিক পুরস্কার: আবুধাবি চলচ্চিত্র উৎসবে স্বীকৃতি

এছাড়াও চঞ্চল চৌধুরী, জয়া বাবু, আরিফিন শুভ, ফেরদৌস আহমেদ প্রমুখ বাংলাদেশী অভিনেতা-অভিনেত্রী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে তাদের অভিনীত চলচ্চিত্র নিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন এবং সেখানে স্বীকৃতি পেয়েছেন। এর ফলে বাংলাদেশী চলচ্চিত্র শিল্পের পরিচিতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।

“বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প এখন আর শুধু দেশের সীমানার মধ্যে আবদ্ধ নেই। আমাদের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের মেধা ও প্রতিভা দিয়ে সাফল্য অর্জন করছেন। এটি আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের একটি বড় অর্জন।”
— মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, চলচ্চিত্র পরিচালক

উপসংহার

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের ইতিহাসে অসংখ্য প্রতিভাবান নায়ক-নায়িকা তাদের অনন্য অভিনয় প্রতিভা দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন। ‘মুখ ও মুখোশ’ (১৯৫৬) থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত, বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে বিভিন্ন প্রজন্মের অভিনেতা-অভিনেত্রী কাজ করেছেন এবং তাদের প্রত্যেকেই নিজস্ব শৈলী ও অভিনয় দক্ষতা দিয়ে এই শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছেন।

স্বর্ণযুগের রাজ্জাক, কবরী, শাবানা থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের শাকিব খান, আরিফিন শুভ, জয়া আহসান, তিশা – সবাই নিজ নিজ পরিশ্রম, প্রতিভা ও নিষ্ঠা দিয়ে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তাদের অবদান অবিস্মরণীয়।

সময়ের সাথে সাথে চলচ্চিত্র শিল্পের পরিবর্তন, প্রযুক্তির উন্নয়ন, এবং দর্শকদের রুচির পরিবর্তন সত্ত্বেও, বাংলাদেশের নায়ক-নায়িকারা নিজেদের মেধা ও প্রতিভা দিয়ে দর্শকদের হৃদয় জয় করে চলেছেন। তাদের এই অবদানের কারণেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প আজ একটি সম্পূর্ণ শিল্পমাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

আশা করা যায়, ভবিষ্যতে নতুন প্রজন্মের আরও অনেক প্রতিভাবান নায়ক-নায়িকা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবেন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের সুনাম বৃদ্ধি করবেন।

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের ইতিহাস, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ, ২০১৫
  2. বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তালিকা, তথ্য মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
  3. বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (বিএফডিসি) আর্কাইভ
  4. চলচ্চিত্র জগতের নক্ষত্ররা, আবদুল হাই সিকদার, ২০১০
  5. বাংলাদেশের চলচ্চিত্র: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ, আনিসুজ্জামান, ২০১৮

#বাংলাদেশীচলচ্চিত্র
#নায়কনায়িকা
#ঢাকাইসিনেমা
#বাংলাদেশীঅভিনেতা
#জাতীয়চলচ্চিত্রপুরস্কার
#বাংলাদেশফিল্মইন্ডাস্ট্রি

আপনি যদি এই নিবন্ধটি উপভোগ করে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুন:





Latest articles

Related articles