রণবীর কাপুর এর সিনেমা: বলিউডের অভিনয় সম্রাটের কীর্তিময় যাত্রা
⏱️ পড়তে সময় লাগবে: ১০ মিনিট
রণবীর কাপুর: বলিউডের প্রতিভাবান অভিনেতা এবং কাপুর পরিবারের উত্তরাধিকারী
সূচিপত্র
ভূমিকা
বলিউডের বিখ্যাত কাপুর পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের প্রতিনিধি রণবীর কাপুর বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা অভিনেতা। ২০০৭ সালে “সাওয়ারিয়া” সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হওয়ার পর থেকে তিনি তাঁর অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা, বিভিন্ন চরিত্রে রূপান্তরের ক্ষমতা এবং স্ক্রিনে অনন্য উপস্থিতির জন্য সমালোচক ও দর্শক উভয়ের প্রশংসা অর্জন করেছেন।
রণবীর তাঁর কর্মজীবনে বাণিজ্যিক সিনেমা থেকে শুরু করে আর্ট হাউস প্রোডাকশন পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। “রকস্টার”, “বর্ফি”, “সঞ্জু”, “তামাশা” এবং “অ্যানিমাল” সহ বিভিন্ন সিনেমায় তাঁর অভিনয় তাঁকে বলিউডের সর্বাধিক প্রতিভাবান অভিনেতাদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
রণবীর কাপুর বলিউডের প্রধান কাপুর পরিবারের সদস্য, ঋষি কাপুরের পুত্র এবং রাজ কাপুরের নাতি। তিনি ফিল্মফেয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কার ৬ বার জিতেছেন এবং ২০২৩ সালে প্রকাশিত “অ্যানিমাল” সিনেমাটি তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় বক্স অফিস হিট।
প্রাথমিক জীবন ও ক্যারিয়ারের শুরু
রণবীর কাপুর ১৯৮২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা প্রখ্যাত অভিনেতা ঋষি কাপুর এবং মাতা নিতু কাপুর, দুজনেই বলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা ছিলেন। বলিউডের সবচেয়ে প্রভাবশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও, রণবীর সিনেমায় আসার আগে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন।
রণবীরের প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা তাঁকে চলচ্চিত্র শিল্পের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে গভীর জ্ঞান দিয়েছে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আসার আগে তিনি শুধু অভিনয়ই নয়, ফিল্ম নির্মাণের আনুষঙ্গিক বিষয়গুলোও শিখেছিলেন, যা পরবর্তীতে তাঁর ক্যারিয়ারে সাহায্য করেছে। তাঁর প্রথম সিনেমা “সাওয়ারিয়া” মুক্তি পেয়েছিল শাহরুখ খানের “ওম শান্তি ওম”-এর সাথে, ফলে বক্স অফিসে তেমন সাফল্য পায়নি, কিন্তু তাঁর অভিনয় দক্ষতা পরিচালকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।
কিশোর-কাপুর:
রণবীর ছোটবেলা থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। তাঁর মতে, বাড়িতে প্রায়ই সিনেমা সম্পর্কে আলোচনা হত, এবং তিনি দাদা রাজ কাপুরের সিনেমাগুলো দেখে বেড়ে উঠেছেন। তিনি একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমার রক্তে সিনেমা আছে। এটা আমার ডিএনএতে আছে।”
প্রথম দিকের সিনেমা (২০০৭-২০১০)
অভিষেকের পর রণবীর কাপুর ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান তৈরি করতে শুরু করেন। প্রথম দিকের সিনেমাগুলোতে তিনি বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেন, যা তাঁর বহুমুখী প্রতিভার পরিচয় দেয়। এই সময়কালে তাঁর অভিনীত সিনেমাগুলো থেকে পরিচালকরা বুঝতে পারেন যে তিনি একজন গভীরভাবে নিবেদিত এবং প্রতিভাবান অভিনেতা।
সিনেমার নাম | বছর | চরিত্র | বিশেষ উল্লেখ |
---|---|---|---|
সাওয়ারিয়া | ২০০৭ | রাজ | সঞ্জয় লীলা ভানসালির পরিচালনায় অভিষেক |
বচ্চনা এ হসিনো | ২০০৭ | রাজ | দীপিকা পাড়ুকোনের সাথে জুটি |
ওয়েক আপ সিড | ২০০৯ | সিড | যশ রাজ ফিল্মসের সাথে প্রথম সহযোগিতা |
আজব প্রেম কি গজব কাহানী | ২০০৯ | প্রেম | কাটরিনা কাইফের সাথে হিট জুটি |
রাজনীতি | ২০১০ | সাই | প্রখর চরিত্রে প্রথম অভিনয় |
“আজব প্রেম কি গজব কাহানী” (২০০৯) ছিল রণবীরের প্রথম বড় বাণিজ্যিক সাফল্য। এই সিনেমাটি বক্স অফিসে ভালো ব্যবসা করে এবং তাঁর রোমান্টিক হিরো ইমেজ তৈরি করে। অন্যদিকে, “রাজনীতি” (২০১০) সিনেমায় তিনি একটি নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করে তাঁর বহুমুখিতার পরিচয় দেন, যা সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ায়।
প্রথম দিকে রণবীর রোমান্টিক ও প্রেমের গল্পের সিনেমায় বেশি অভিনয় করেছেন

“রাজনীতি” সিনেমায় তিনি অনন্য ও প্রখর চরিত্রে অভিনয় করেছেন
প্রথম পর্বের ফলাফল:
রণবীর কাপুরের প্রথম দিকের সিনেমাগুলো বক্স অফিসে মিশ্র সাফল্য পেলেও, এটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে তিনি একজন অসামান্য প্রতিভাবান অভিনেতা। তাঁর প্রত্যেকটি সিনেমায় তিনি নিজেকে নতুনভাবে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন, যা তাঁকে বলিউডের অন্যান্য সমসাময়িক অভিনেতাদের থেকে আলাদা করে তুলেছিল।
ব্রেকথ্রু সিনেমা (২০১১-২০১৫)
২০১১ থেকে ২০১৫ সাল রণবীর কাপুরের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল। এই সময়কালে তিনি কয়েকটি ব্রেকথ্রু সিনেমা করেন, যা তাঁকে বলিউডের শীর্ষ অভিনেতাদের সারিতে নিয়ে যায়। “রকস্টার” (২০১১), “বর্ফি” (২০১২), এবং “ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি” (২০১৩) সিনেমাগুলো তাঁর ক্যারিয়ারে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে।
এই সময়কালে রণবীর কাপুর দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি শুধু একজন নায়ক নন, বরং একজন বহুমুখী অভিনেতা। তিনি বাণিজ্যিক সিনেমা থেকে শুরু করে আর্ট ফিল্ম পর্যন্ত সবধরনের সিনেমায় অভিনয় করেছেন এবং প্রতিটি চরিত্রে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। “রকস্টার” এবং “বর্ফি” সিনেমার জন্য তিনি প্রশংসা ও পুরস্কার দুটোই অর্জন করেন, যা তাঁর অভিনয় দক্ষতার প্রমাণ।
শিল্পীর প্রতিশ্রুতি:
২০১১ থেকে ২০১৫ সাল রণবীর কাপুরের ক্যারিয়ারে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল, যখন তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন একজন সেরা অভিনেতা হিসেবে। এই সময়ে তিনি অভিনয়ের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি ও গভীরতা প্রমাণ করেন। বিশেষ করে “রকস্টার” এবং “বর্ফি” সিনেমায় তাঁর অভিনয় বলিউডের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
সাম্প্রতিক সাফল্য (২০১৬-বর্তমান)
২০১৬ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত, রণবীর কাপুর বলিউডের শীর্ষ অভিনেতা হিসেবে নিজের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করেছেন। এই সময়ে তিনি “এ দিল হ্যায় মুশকিল” (২০১৬), “সঞ্জু” (২০১৮), “ব্রহ্মাস্ত্র” (২০২২) এবং “অ্যানিমাল” (২০২৩) সহ বেশ কয়েকটি বড় হিট সিনেমা করেছেন।
আয়ান মুখার্জি পরিচালিত এই সিনেমায় রণবীর বুনি নামের এক প্রাণবন্ত যুবকের ভূমিকায় অভিনয় করেন। দীপিকা পাড়ুকোনের সাথে তাঁর কেমিস্ট্রি এবং সিনেমার গল্প এটিকে সেই বছরের সবচেয়ে বড় হিট সিনেমাগুলোর একটিতে পরিণত করে। এই সিনেমার পর রণবীর বলিউডের সুপারস্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
“ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি আমার ক্যারিয়ারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।” – রণবীর কাপুর
এই সময়কালে রণবীর “বম্বে ভেলভেট” (২০১৫) এবং “রয় (২০১৫)” সিনেমাতেও অভিনয় করেন। “বম্বে ভেলভেট” সিনেমায় তিনি অনুরাগ কাশ্যপের সাথে কাজ করেন এবং জনি বালরাজের চরিত্রে অভিনয় করেন। যদিও সিনেমাটি বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি, তবে রণবীরের অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল।
পেশাদার ডুবে যাওয়া:
এই সময়কালে রণবীর নিজেকে চরিত্রের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য পরিচিত হয়ে ওঠেন। “রকস্টার” সিনেমার জন্য তিনি গিটার বাজানো শিখেছিলেন, “বর্ফি”তে সংলাপহীন অভিনয়ের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন এবং “ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি”র জন্য ট্রেকিং শিখেছিলেন। এই উৎসর্গ এবং প্রতিশ্রুতি তাঁকে বলিউডের অন্যতম শ্রদ্ধেয় অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
সাম্প্রতিক সাফল্য (২০১৬-বর্তমান)
২০১৬ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত রণবীর কাপুরের ক্যারিয়ার আরও বিকশিত হয়েছে। এই সময়কালে তিনি “এ দিল হ্যায় মুশকিল” (২০১৬), “জাগ্গা জাসুস” (২০১৭), “সঞ্জু” (২০১৮), “ব্রহ্মাস্ত্র” (২০২২) এবং “অ্যানিমাল” (২০২৩) সহ বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
সিনেমার নাম | বছর | পরিচালক | উল্লেখযোগ্য বিষয় |
---|---|---|---|
সঞ্জু | ২০১৮ | রাজকুমার হিরানি | সঞ্জয় দত্তের বায়োপিক; বক্স অফিস ব্লকবাস্টার |
ব্রহ্মাস্ত্র | ২০২২ | আয়ান মুখার্জি | ফ্যান্টাসি ট্রিলজির প্রথম সিনেমা; বড় বাজেটের প্রডাকশন |
শমশেরা | ২০২২ | করণ মল্হোত্রা | প্রথম পিরিয়ড অ্যাকশন ফিল্ম; বক্স অফিসে ব্যর্থ |
টু বাই টু: ড্রিম গার্ল | ২০২৩ | লভ রঞ্জন | রোমান্টিক কমেডি; শ্রদ্ধা কাপুরের সাথে অভিনয় |
অ্যানিমাল | ২০২৩ | সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গা | ব্যাপক বক্স অফিস সাফল্য; বিতর্কিত চরিত্র |
“সঞ্জু” (২০১৮) বলিউড অভিনেতা সঞ্জয় দত্তের জীবনী অবলম্বনে নির্মিত সিনেমা, যেখানে রণবীর সঞ্জয় দত্তের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই সিনেমায় তাঁর অসাধারণ অভিনয়ের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন এবং সিনেমাটি বক্স অফিসে ব্যাপক সাফল্য পায়। রণবীরের চরিত্র রূপান্তরের ক্ষমতা এই সিনেমায় পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়েছিল।
“ব্রহ্মাস্ত্র” (২০২২) সিনেমাতে রণবীর শিব নামক এক যুবকের চরিত্রে অভিনয় করেন, যে অগ্নি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আবিষ্কার করে। এটি আয়ান মুখার্জি পরিচালিত ফ্যান্টাসি ট্রিলজির প্রথম সিনেমা, যেখানে তাঁর সহ-অভিনেত্রী ছিলেন তাঁর স্ত্রী আলিয়া ভাট। ২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়া “অ্যানিমাল” সিনেমায় রণবীরের অভিনয় ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে, যদিও সিনেমাটির বিষয়বস্তু নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল।
পেশাদার সাফল্য:
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রণবীর কাপুর তাঁর পেশাদার সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেছেন। তিনি এমন একজন অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, যিনি বাণিজ্যিক সাফল্য এবং সমালোচকদের প্রশংসা উভয়ই অর্জন করতে সক্ষম। “অ্যানিমাল” সিনেমার সাফল্যের পর, বলিউডের সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন অভিনেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম হয়ে উঠেছেন।
অভিনয় শৈলী ও বৈশিষ্ট্য
রণবীর কাপুরের অভিনয় শৈলী এবং পদ্ধতি তাঁকে সমসাময়িক বলিউড অভিনেতাদের মধ্যে আলাদা করে তুলেছে। তিনি পদ্ধতিগত অভিনয় (Method Acting) এবং চরিত্রে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য পরিচিত। প্রতিটি ভূমিকার জন্য তিনি গভীর গবেষণা করেন এবং সেই চরিত্রের মানসিকতা, শারীরিক ভাষা এবং আচরণ আত্মস্থ করার চেষ্টা করেন।
রণবীরের অভিনয় শৈলী পরিচালকদের মধ্যে খুব সম্মানিত। প্রখ্যাত পরিচালক ইমতিয়াজ আলী, যিনি রণবীরের সাথে “রকস্টার” এবং “তামাশা” সিনেমায় কাজ করেছেন, একবার বলেছিলেন: “রণবীর এমন একজন অভিনেতা, যিনি চরিত্রের অন্তর্নিহিত আবেগকে বোঝেন এবং তাকে পর্দায় প্রাণবন্ত করে তোলেন।” আয়ান মুখার্জি, যিনি “ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি” এবং “ব্রহ্মাস্ত্র”-এ রণবীরের সাথে কাজ করেছেন, তাঁকে “প্রজন্মের সেরা অভিনেতা” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
অভিনয় দর্শন:
রণবীর কাপুর একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমি সিনেমার গল্প এবং আমার চরিত্রকে ভালোবাসি না হলে কোনো সিনেমা করি না। আমার কাছে অভিনয় শুধু একটি পেশা নয়, এটি আমার জীবনের অংশ।” এই দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর কাজের প্রতি তাঁর সমর্পণ এবং নিষ্ঠার প্রতিফলন, যা তাঁকে বলিউডের অন্যতম সেরা অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
পুরস্কার ও সম্মাননা
রণবীর কাপুর তাঁর অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার জন্য বেশ কয়েকটি পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতা পুরস্কার ৬ বার জিতেছেন, যা এই পুরস্কারের ইতিহাসে একটি রেকর্ড। তাঁর পুরস্কারের তালিকায় রয়েছে:
পুরস্কার | বছর | সিনেমা | বিভাগ |
---|---|---|---|
ফিল্মফেয়ার | ২০১২ | রকস্টার | সেরা অভিনেতা |
ফিল্মফেয়ার | ২০১৩ | বর্ফি | সেরা অভিনেতা |
ফিল্মফেয়ার ক্রিটিকস | ২০১৬ | তামাশা | সেরা অভিনেতা |
ফিল্মফেয়ার | ২০১৯ | সঞ্জু | সেরা অভিনেতা |
ফিল্মফেয়ার | ২০২৩ | ব্রহ্মাস্ত্র | সেরা অভিনেতা |
ফিল্মফেয়ার | ২০২৪ | অ্যানিমাল | সেরা অভিনেতা |
এছাড়াও রণবীর আইফা, জি সিনে, স্টারডাস্ট, স্ক্রীন পুরস্কার সহ বিভিন্ন সম্মানজনক পুরস্কার জিতেছেন। ২০১৮ সালে সঞ্জয় দত্তের বায়োপিক “সঞ্জু” সিনেমাতে অভিনয়ের জন্য তিনি প্রায় প্রতিটি পুরস্কার অনুষ্ঠানে সেরা অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন। ২০২৩ সালে “ব্রহ্মাস্ত্র” এবং ২০২৪ সালে “অ্যানিমাল” সিনেমার জন্য তিনি আরও দুটি ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতা পুরস্কার জিতেন।
সম্মান ও স্বীকৃতি:
রণবীর কাপুরকে ২০২৩ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট (BFI) দ্বারা সম্মানিত করা হয়েছিল। এছাড়াও তিনি টাইম ম্যাগাজিন, ফোর্বস ইন্ডিয়া এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্বারা এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী অভিনেতা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছেন। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ভারতীয় সিনেমার প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবন
রণবীর কাপুরের ব্যক্তিগত জীবন প্রায়ই মিডিয়ার আলোচনার বিষয় হয়েছে। বলিউডের একজন প্রভাবশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও, তিনি সবসময় নিজের পরিচয় তৈরি করতে চেয়েছেন। তাঁর বাবা ঋষি কাপুর এবং মা নিতু কাপুর দুজনেই বিখ্যাত অভিনেতা ছিলেন। তাঁর বোন রিধিমা কাপুর সাহনি একজন ফ্যাশন ডিজাইনার।
রণবীর কাপুর তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে প্রায়ই ব্যক্তিগত থাকেন, তবে তিনি কিছু সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে তাঁর বাবা ঋষি কাপুরের মৃত্যু (২০২০) তাঁর জীবনে একটি বড় প্রভাব ফেলেছিল। তিনি তাঁর পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে “শমশেরা” সিনেমাটি উৎসর্গ করেছিলেন। পারিবারিক জীবনের প্রতি তাঁর আকর্ষণ এবং সন্তানের প্রতি ভালোবাসা তাঁকে পেশাদার ও ব্যক্তিগত জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করেছে।
বাবার প্রভাব:
রণবীর একাধিক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন যে তাঁর বাবা ঋষি কাপুর তাঁর সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তিনি বলেছেন, “আমার বাবা আমার হিরো। তাঁর অভিনয়ের প্রতি সমর্পণ, শিল্পের প্রতি ভালবাসা, এবং কঠোর পরিশ্রমী মনোভাব আমাকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে। আমি সবসময় তাঁর মতো হতে চেয়েছি।”
আগামী প্রজেক্ট
রণবীর কাপুর তাঁর সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য বেশ কয়েকটি রোমাঞ্চকর প্রজেক্টে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর আগামী সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গল্প ও চরিত্র, যা তাঁর বহুমুখী প্রতিভাকে আরও প্রদর্শন করবে। নিম্নে তাঁর আসন্ন প্রজেক্টগুলোর তালিকা দেওয়া হলো:
সিনেমার নাম | পরিচালক | ধরন | মুক্তির সম্ভাব্য সময় |
---|---|---|---|
ব্রহ্মাস্ত্র পার্ট ২: দেব | আয়ান মুখার্জি | ফ্যান্টাসি/অ্যাডভেঞ্চার | ২০২৫ |
রামায়ণ | নীতেশ তিওয়ারি | পৌরাণিক | ২০২৬ |
অ্যানিমাল পার্ক | সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গা | ক্রাইম/থ্রিলার | ২০২৬ |
লভ অ্যান্ড ওয়ার | সঞ্জয় লীলা ভানসালি | রোমান্স/ওয়ার | ২০২৫ |
“ব্রহ্মাস্ত্র পার্ট ২: দেব” হলো ব্রহ্মাস্ত্র ট্রিলজির দ্বিতীয় সিনেমা, যেখানে রণবীর শিব চরিত্রে অভিনয় করবেন। প্রথম সিনেমার সাফল্যের পর এই সিকুয়েলটি অত্যন্ত প্রত্যাশিত। “রামায়ণ” সিনেমায় তিনি ভগবান রামের চরিত্রে অভিনয় করবেন, যা একটি উচ্চ বাজেটের পৌরাণিক সিনেমা। “অ্যানিমাল পার্ক” হল “অ্যানিমাল” সিনেমার সিকুয়েল, যেখানে তিনি আবারও রণবীর সিং চরিত্রে ফিরে আসবেন।
এছাড়াও রণবীর কাপুর একটি বায়োপিক সিনেমাতে কাজ করার প্রস্তাব পেয়েছেন, যেখানে তিনি ক্রিকেট লিজেন্ড সৌরভ গাঙ্গুলির চরিত্রে অভিনয় করতে পারেন। তিনি সঞ্জয় লীলা ভানসালির “লভ অ্যান্ড ওয়ার” নামে একটি রোমান্টিক ওয়ার সিনেমাতেও অভিনয় করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
বলিউড নায়িকাদের নাম সহ ছবি ১০০ টি সর্বকালের নায়িকা লিস্ট
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
এক সাক্ষাৎকারে রণবীর উল্লেখ করেছেন যে তিনি পরিচালনায় আগ্রহী এবং ভবিষ্যতে পরিচালক হিসাবে কাজ করতে চান। তিনি প্রোডাকশন কোম্পানি শুরু করার পরিকল্পনাও করছেন, যা নতুন প্রতিভাকে সুযোগ দেবে এবং বিভিন্ন ধরনের কাহিনী নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করবে। তিনি আগ্রহী যে তাঁর মেয়ে রাহা যেন তাঁর ব্যক্তিগত প্রাধান্য পায় এবং তিনি সময় দিয়ে পিতৃত্বের দায়িত্ব পালন করতে চান।
উপসংহার
রণবীর কাপুর তাঁর দীর্ঘ ১৫+ বছরের ক্যারিয়ারে বলিউডের অন্যতম সেরা অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিশেষ করে, “রকস্টার”, “বর্ফি”, “তামাশা”, “সঞ্জু” এবং “অ্যানিমাল” সিনেমাগুলোতে তাঁর মনোমুগ্ধকর অভিনয় দেখিয়েছেন তিনি কতটা বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তাঁর প্রতিটি সিনেমায় নিজেকে চ্যালেঞ্জ করার ও নতুন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার চেষ্টা তাঁকে সমসাময়িক অভিনেতাদের থেকে আলাদা করে তুলেছে।
রণবীর শুধু কাপুর পরিবারের উত্তরাধিকারী হিসেবেই নয়, বরং নিজের যোগ্যতা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বলিউডে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন। ছয়বার ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতা পুরস্কার জেতা তাঁর অসাধারণ প্রতিভা ও পেশাদারিত্বের প্রমাণ। মেক্সিকান পরিচালক আলেহান্দ্রো গনজালেজ ইনারিতু তাঁকে “ভারতীয় সিনেমার ভবিষ্যৎ” বলে উল্লেখ করেছেন।
রণবীর তাঁর বিভিন্ন ধরনের চরিত্র ও গল্পে অভিনয় করার মাধ্যমে বলিউড সিনেমার বিকাশে অবদান রেখেছেন। তিনি ব্যবসায়িক সিনেমা থেকে শুরু করে আর্ট সিনেমা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্টে কাজ করেছেন, যা দর্শকদের নতুন ধরনের কাহিনী এবং চরিত্রের সাথে পরিচিত করেছে। বর্তমানে, তিনি তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা অবস্থানে আছেন, আগামী বছরগুলিতে আরও বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্টে তাঁকে দেখার আশা করা যায়।
শেষ কথা:
রণবীর কাপুরের সিনেমা যাত্রা শুধু বলিউডের ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়ই নয়, বরং ভারতীয় সিনেমার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির একটি পথও খুলে দিয়েছে। তাঁর অভিনয় দক্ষতা, চরিত্রের প্রতি সমর্পণ, এবং নিজেকে নবায়ন করার ক্ষমতা তাঁকে একজন প্রকৃত শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আগামী প্রজন্মের অভিনেতাদের জন্য তিনি একটি আদর্শ হিসেবে কাজ করবেন, যারা অবশ্যই তাঁর কাজ থেকে অনুপ্রেরণা পাবে।